এয়ার গান లిq& এ সমস্তার কোনো মীমাংসা হয় নি। আমরা হৈ হৈ করে বাইরে গিয়ে খবর দিলাম। গ্রাম্য চৌকিদার ও দফাদার দেখতে এল। কেন যে বরো বাগদিনী এই জঙ্গলে এসে লুকিয়ে ছিল নিজের ঘর ছেড়ে–এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে। কেউ বল্পে, ওর মাথা হঠাৎ খারাপ হয়ে গিয়েছিল, কেউ বল্পে, ভূতে পেয়েছিল। কিন্তু বরো বাগদিনী মরেছে অনাহারের শীর্ণতায় ও সম্ভবত আশ্বিন কাৰ্ত্তিক মাসের ম্যালেরিয়ায় ভুগে। কেউ একটু জলও দেয় নি তার মুখে । কে-ই বা দেবে এ জঙ্গলে ? জানতোই বা কে ? বরো বাগদিনীর এ আত্মগোপনের রহস্য তার সঙ্গেই পরপারে চলে গেল। এয়ার গান হাৰুল নাকি পাস করেছে ফাস্ট হয়ে । কথাটা শুনে গৰ্ব্বে তার বুকটা তো ফুলে উঠলো দশ হাত। হাওয়ার ওপর ভর করে সে ফিরে এল বাড়ীতে ধীরে ধীরে। বিপুল আনন্দে সার রাত্রি তার ভাল ঘুমই হল না । মাকে কথাটা বলতে মা মাথায় হাত দিয়ে আশীৰ্ব্বাদ করলেন, "মুখী হও—বড় হও বাবা ? সত্যি, তার এই দীর্ঘদিনের খাটুনি সার্থক হয়েচে । বাড়ীর লোকের চোখ এড়িয়ে কত রাত্রি জেগে সে বই পড়ে গেছে, তার পড়ার বই একাগ্রচিত্তে। আজ তার পরিণতি ওর প্রথম হওয়া। সকলে তো কথাটা শুনে বিশ্বাসই করতে চায় না। স্কুলের ছেলেরা তো প্রথমে হেসে উড়িয়েই দিয়েছিল একেবারে। সারাদিন যে আড্ডা মেরে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, সে এত উন্নতি করলে কি করে ? তবু হাবুল ফাস্ট হল— শীতের ঠাণ্ড বাতাস বইছে ঝির ঝির করে। হাবুলের ঘুম ভেঙে গেল ; ধড়মড় করে উঠে বসলো। মনে পড়ল গতকালের ঘটনা—তার প্রথম হবার কথা। তারপর আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেল ঘরের বাইরে । হাবুল গিয়ে দাড়াল তার ছোট-কাকার ঘরের দরজায়। ছোট কাকা তখন ঘুমুচ্চেন নাক ডাকিয়ে লেপের মধ্যে । হাবুল ডাকল, "ছোট-কাকা— ছোট-কাকা । ছোটকাকার ঘুম ভাঙলো। তিনি দু-হাত দিয়ে চোখ রগড়ে উত্তর দিলেন, “কি রে হাৰুল!” হাবুল বললে, ‘কাক, আমি ফাস্ট হয়েচি ’ এমন সময় এই সকালে টুকু এসে হাজির হয় । সে হাবুলের কথা শুনে তীব্র প্রতিবাদ করলে, “কক্ষনে না ছোট-কাকা ।” হাবুল রুখে উঠলে, “তুই জানিস টুম্ব I' টুম্বও দমে না একটুও, ‘ইস । উনি আবার ফাস্ট হবেন ? তবে যদি টোকেন, সে-কথা আলাদা।’ -
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৬৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।