পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8 বিভূতি-রচনাবলী বললাম-অন্ধকার হয়ে আসছে, বেশী দূর ষেও না। তার পরে আমি পার্থী ছাড়াচ্ছি--কিছু দূরে জঙ্গলের বাইরেই দুবার বন্দুকের আওয়াজ শুনলাম। একটুখানি থেমে আবার আর একটা আওয়াজ। তার পরেই সব চুপ। মিনিট দশ কেটে গেল, জিম আসে না দেখে আমি নিজের রাইফেল্ট নিয়ে যেদিক থেকে আওয়াজ এসেছিল সেদিকে একটু যেতেই দেখি জিম্ আসছে—পেছনে কি একটা ভারী মত টেনে আনছে। আমায় দেখে বললে— ভারী চমৎকার ছালখানা ! জঙ্গলের ধারে ফেলে রাখলে হায়নাতে সাবাড় করে দেবে। তাবুর কাছে টেনে নিয়ে যাই চল । দুজনে টেনে সিংহের প্রকাণ্ড দেহটা তাবুর আগুনের কাছে নিয়ে এসে ফেললাম। তার পর ক্রমে রাত হল। খাওয়াদাওয়া সেরে আমরা শুয়ে পড়লুম। : অনেক রাত্রে সিংহের গর্জনে ঘুম ভেঙে গেল। তাবু থেকে অল্প দূরেই সিংহ ডাকছে। অন্ধকারে বোঝা গেল না ঠিক কত দূরে । আমি রাইফেল নিয়ে বিছানায় উঠে বসলাম। জিম্ শুধু একবার বললে—সন্ধ্যাবেলার সেই সিংহটার জুড়ি। বলেই সে নিৰ্ব্বিকারভাবে পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আমি তাবুর বাইরে এসে দেখি আগুন নিবে গিয়েছে। পাশে কাঠকুটো ছিল, তাই দিয়ে আবার জোর আগুন জাললাম। তার পরে আবার এসে শুয়ে পড়লাম । পরদিন সকালে উঠে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেলাম। কিছুদূর গিয়ে জনকয়েক কাফিরের সঙ্গে দেখা হোল । তারা হরিণ শিকার করতে এসেছে । আমরা তাদের তামাকের লোভ দেখিয়ে কুলী ও পথপ্রদর্শক হিসেবে সঙ্গে নিতে চাইলাম। তারা বললে—তোমরা জানো না তাই ও কথা বলছ। এ জঙ্গলে মানুষ আসে না। যদি বঁাচতে চাও তো ফিরে যাও। ঐ পাহাড়ের শ্রেণী অপেক্ষাকৃত নীচু, ওটা পার হয়ে মধ্যে খানিকট সমতল জায়গা আছে, ঘন বনে ঘেরা, তার ওদিকে আবার এর চেয়েও উচু পৰ্ব্বতশ্রেণী। ঐ বনের মধ্যের সমতল জায়গাটা বড় বিপজ্জনক, ওখানে বুনিপ, থাকে। বুনিপের হাতে পড়লে আর ফিরে আসতে হবে না। ওখানে কেউ যায় না। আমরা তামাকের লোভে ওখানে যাবো মরতে ! ভালে চাও তো তোমরাও যেও না । আমরা জিজ্ঞাসা করলাম—বুনিপ কি ? তারা জানে না। তবে তারা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলে, বুনিপ, কি না জানলেও সে কি অনিষ্ট করতে পারে সেট। তারা খুব ভাল রকমই জানে। ভয় আমাদের ধাতে ছিল না, জিম্ কার্টারের তো একেবারেই না। সে আরও বিশেষ করে জেদ ধরে বসল। এই বুনিপের রহস্য তাকে ভেদ করতেই হবে—হীরা পাই বা না পাই। মৃত্যু যে তাকে অলক্ষিতে টানছে, ওখনও যদি বুঝতে পারতাম। বৃদ্ধ এই পৰ্য্যস্ত বলে একটু হাপিয়ে পড়ল। শঙ্করের মনে তখন অত্যন্ত কৌতুহল হয়েছে, এ ধরনের কথা সে কখনও আর শোনে নি। মুমুমু ডিয়েগো আলভারেজের জীর্ণ পরিচ্ছদ ও শিরাবহুল হাতের দিকে চেয়ে, তার পাকা ভুরু-জোড়ার নীচেকার ইস্পাতের মত নীল দীপ্তি