২৬ বিভূতি-রচনাবলী নদীর তীর থেকেই অনেক সময় খনিজস্রব্যের সন্ধান পাওয়া যায় ! নদীর নানা দিকে আমরা বালি পরীক্ষা করে বেড়াই, কিছুই কোথাও পাওয়া যায় না। সোনার একটা রেণু পৰ্য্যস্ত নেই নদীর বালিতে। আমরা ক্রমে হতাশ হয়ে পড়লুম। তখন প্রায় কুড়ি-বাইশ দিন কেটে গিয়েছে। সন্ধ্যার সময় কফি খেতে খেতে জিম্ বললে, দেখ, আমার মন বলছে এখানে আমরা সোনার সন্ধান পাবো। থাকো এখানে আর কিছুদিন । আরও কুড়িদিন কাটল। বেবুনের মাংস অসহ ও অত্যন্ত অরুচিকর হয়ে উঠেছে। জিমের মত লোকও হতাশ হয়ে পড়ল। আমি বললাম—আর কেন জিম্, চল ফিরি এবার। কাফির গ্রামে আমাদের ঠকিয়েছে। এখানে কিছু নেই। g জিম্ বললে—এই পৰ্ব্বতশ্রেণীর নানা শাখা আছে, সবগুলো না দেখে যাবে না। একদিন পাহাড়ী নদীটার খাতের ধারে বসে বালি চালতে চালতে পাথরের মুড়ির রাশির মধ্যে অৰ্দ্ধপ্রোথিত একথান হলদে রঙের ছোট পাথর আমি ও জিম্ একসঙ্গেই দেখতে পেলাম। দুজনেই তাড়াতাড়ি সেটা খুড়ে তুললাম। আমাদের মুখ আনন্দে ও বিস্ময়ে উজ্জল হয়ে উঠল। জিম্ বললে—ডিয়েগো, পরিশ্রম এতদিনে সার্থক হল—চিনেছ তো ? আমিও বুঝেছিলাম। বললাম—হঁ্যা। কিন্তু নদীস্রোতে ভেসে আসা জিনিসটা। খনির অস্তিত্ব নেই এখানে । পাথরখানা দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত হলদে রঙের হীরকের জাত। অবশ্ব খুব আনন্দের কোনো কারণ ছিল না, কারণ এতে মাত্র এটাই প্রমাণ হয় যে, এই বিশাল পৰ্ব্বতশ্রেণীর কোনো অজ্ঞাত, দুর্গম অঞ্চলে হলদে হীরকের খনি আছে। নদীস্রোতে ভেসে এসেছে তা থেকে একটা স্তরের একটা টুকরো। সে মূল খনি খুজে বার করা অমাহুষিক পরিশ্রম, ধৈর্য্য ও সাহস-সাপেক্ষ । সে পরিশ্রম, সাহস ও ধৈৰ্য্যের অভাব আমাদের ঘটত না, কিন্তু যে দৈত্য ঐ রহস্যময় বনপৰ্ব্বতের অমূল্য হীরকখনির প্রহরী, সে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের বাধা দিলে। একদিন আমরা বনের মধ্যে একটা পরিষ্কার জায়গায় বসে সন্ধ্যার দিকে বিশ্রাম করছি, আমাদের সামনে পরিষ্কার জায়গাতে একটা তালগাছ, তালগাছের তলায় গুড়িটা ঘিরে খুব ঘন বন-ঝোপ । হঠাৎ আমরা দেখলাম কিসে যেন অত বড় তালগাছটা এমন নাড়া দিচ্ছে যে, তার ওপরকারের শুকৃনো ডালপালাগুলো খৰ্ব থর করে নড়ে উঠছে, যেমন নড়ে ঝড় লাগলে । গাছটাও সেই সঙ্গে নড়ছে। আমরা আশ্চৰ্য্য হয়ে গেলাম। বাতাস নেই কোনোদিকে, অথচ তালগাছটা নড়ছে কেন ? আমাদের মনে হল কে যেন তালগাছের গুড়িটা ধরে ঝাকি দিচ্ছে। জিম্ তখুনি ব্যাপারটা কি দেখতে গুড়ির তলায় সেই জঙ্গলটার মধ্যে ঢুকলো । সে ওর মধ্যে ঢুকবার অল্পক্ষণ পরেই আমি একটা আৰ্ত্তনাদ শুনতে পেয়ে রাইফেল নিয়ে ছুটে গেলুম—ঝোপের মধ্যে ঢুকে দেখি জিম্ রক্তাক্ত দেহে বনের মধ্যে পড়ে আছে—কোন
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।