চাদের পাহাড় २१ ভীষণ বলবান জন্তুতে তার মুখের সামনে থেকে বুক পৰ্য্যন্ত ধারালে নখ দিয়ে চিরে ফেড়ে ফেলেছে—যেমন পুরানো বালিশ ফেড়ে তুলে বার করে তেমনি। জিম্ শুধু বললে—সাক্ষাৎ শয়তান—মূৰ্ত্তিমান শয়তান— হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বললে—পালাও-পালাও— তার পরেই জিম্ মারা গেল। তালগাছের গায়ে দেখি যেন কিসের মোট ও শক্ত চোচ, লেগে আছে। আমার মনে হল কোন ভীষণ বলবান জানোয়ার তালগাছের গায়ে গা ঘষছিল, গাছটা ওরকম নড়ছিল সেই জন্যেই। জন্তুটার কোনো পাত্ত পেলাম না। জিমের দেহ ফাকা জায়গায় বার করে আমি রাইফেল হাতে ঝোপের ওপারে গেলুম। সেখানে গিয়ে দেখি মাটির ওপরে কোনো অজ্ঞাত জস্তুর পায়ের চিহ্ন, তার মোটে তিনটে আঙ্গুল পায়ে–কিছুদূর গেলুম পায়ের চিহ্ন অনুসরণ করে, জঙ্গলের মধ্যে খানিকটা গিয়ে একটা গুহার মুখে পদচিহ্নটা ঢুকে গেল। গুহার প্রবেশ-পথের কাছে শুকনো বালির ওপরে ওই অজ্ঞাত ভয়ঙ্কর জানোয়ারটার বড় বড় তিন-আঙ্গুলে থাবার দাগ রয়েছে। তখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। সেই জনহীন অরণ্যভূমি ও পৰ্ব্বত-বেষ্টিত অজ্ঞাত উপত্যকায় এক দাড়িয়ে আমি এক অজ্ঞাততর ভীষণ বলবান জন্তুর অনুসরণ করছি। ডাইনে চেয়ে দেখি প্রায়ান্ধকার সন্ধ্যায় স্বউচ্চ ব্যাসান্টের দেওয়াল খাড় উঠেছে প্রায় চার হাজার ফুট, বনে বনে নিবিড়, খুব উচুতে পৰ্ব্বতের বাশবনের মাথায় সামান্য যেন একটু রাঙা রোদ–কিম্বা হয়তো আমার চোখের ভুল, অনন্ত আকাশের আভা পড়ে থাকবে। ভাবলাম, এ সময় গুহার মধ্যে ঢোকা বা এখানে দাড়িয়ে থাকা বিবেচনার কাজ হবে না । জিমের দেহ নিয়ে তাবুতে ফিরে এলুম। সারারাত তার মৃতদেহ নিয়ে আগুন জেলে রাইফেল তৈরী রেখে বসে রইলুম। পরদিন জিমকে সমাধিস্থ করে আবার ওই জানোয়ারটার খোজে বার হলাম। কিন্তু মুশকিল এই যে, সে গুহা এবং সেই তালগাছটা পৰ্য্যন্ত অনেক খুঁজেও কিছুতেই বার করতে পারলুম না। ও রকম অনেক গুহা আছে পৰ্ব্বতের নানা জায়গায়। সন্ধ্যার অন্ধকারে কোন গুহা দেখেছিলাম কে জানে ? সঙ্গীহীন অবস্থায় সেই মহাদুর্গম রিখটারসভেন্ড পৰ্ব্বতশ্রেণীর বনের মধ্যে থাকা চলে না। পনেরো দিন হেঁটে সেই কাফির বস্তিতে পৌঁছলাম। তারা চিনতে পারলে, খুব খাতির করলে। তাদের কাছে জিমের মৃত্যু-কাহিনী বললুম। শুনে তাদের মুখ ভয়ে কেমন হয়ে গেল—ছোট ছোট চোখ ভয়ে বড় হয়ে উঠল। বললে —সৰ্ব্বনাশ! বুনিপ ! ওই ভয়েই ওখানে কেউ যায় না। কাফির বস্তি থেকে আর পাচ দিন হেঁটে অরেঞ্জ নদীর ধারে একখানা ডাচ, লঞ্চ পেলাম । তাতে করে এসে সভ্য জগতে পৌছুলাম। আমি আর কখনো রিখটারসভেন্ড পৰ্ব্বতের দিকে যেতে পারি নি। চেষ্টা করেছিলাম Aঅনেক। কিন্তু বুয়র যুদ্ধ এসে পড়ল। যুদ্ধে গেলাম। আহত হয়ে প্রিটোরিয়ার হাসপাতালে
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৪০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।