চাদের পাহাড় צש করে শঙ্করও সেই মুহূর্তে বন্দুক ওঠালে। কিন্তু শঙ্কর ঘোড়া টেপবার আগে আল্ভারেজের রাইফেল আর একবার আওয়াজ করে উঠল। তার পরেই সব চুপ। ওরা টর্চ জেলে সস্তপণে র্তাবুর বাইরে এসে দেখলে, তাবুর পূর্বদিকের পর্দার বাইরে পর্দাটা খানিকটা ঠেলে ভেতরে ঢুকেছে এক প্রকাও সিংহ। সেটা তখনও মরে নি, কিন্তু সাংঘাতিক আহত হয়েছে। অারও দুবার গুলি খেয়ে সেট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে । আলভারেজ আকাশের নক্ষত্রের দিকে চেয়ে বললে—রাত এখনো অনেক। ওট এখানে পড়ে থাকৃ।” চলে আমরা আমাদের ঘুম শেষ করি। দুজনেই এসে গুয়ে পড়ল—একটু পরে শঙ্কর বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলে আলভারেজের নাসিকা-গর্জন শুরু হয়েছে। শঙ্করের চোখে ঘুম এল না। আধঘণ্টা পরে শঙ্করের মনে হল, আলভারেজের নাসিকা-গর্জনের সঙ্গে পাল্লা দেবার জন্যে টাঙ্গানিয়াক অঞ্চলের সমস্ত সিংহ যেন একযোগে ডেকে উঠল। সে কি ভয়ানক সিংহের ডাক ! ...আগেও শঙ্কর অনেকবার সিংহগর্জন শুনেছে, কিন্তু এ রাত্রের সে ভীষণ বিরাট গর্জন তার চিরকাল মনে ছিল। তা ছাড়া ডাক তাবু থেকে বিশ হাতের মধ্যে। আলভারেজ আবার জেগে উঠল। বললে—না, রাত্রে দেখছি একটু ঘুমুতে দিলে না। আগের সিংহটার জোড়া । সাবধান থাকে। বড় পাজী জানোয়ার। কি দুর্যোগের রাত্রি! তাবুর আগুনও তখন নিকুনিবু। তার বাইরে তো ঘুটফুটে অন্ধকার। পাতলা কেম্বিসের চটের মাত্র ব্যবধান—তার ওদিকে সার্থীহারা পশু। বিরাট গর্জন করতে করতে সেটা একবার তাবু থেকে দূরে যায়, আবার কাছে আসে, কখনও তাবু প্রদক্ষিণ করে । ভোর হবার কিছু আগে সিংহটা সরে পড়ল। ওরাও তাবু তুলে আবার যাত্রা শুরু করলে। ছয় দিন পনেরো পরে শঙ্কর ও আলভারেজ উজিজি বন্দর থেকে ষ্টীমারে টাঙ্গানিয়াক হ্রদের বক্ষে ভাসল। হ্রদ পার হয়ে আলবার্টভিল্ বলে একটা ছোট শহরে কিছু অবিশ্বকীয় জিনিস কিনে নিল। এই শহর থেকে কাবালো পৰ্য্যস্ত বেলজিয়ম গবর্ণমেণ্টের রেলপথ আছে। সেখান থেকে কঙ্গো নদীতে ষ্টীমারে চড়ে তিনদিনের পথ সানকিনি যেতে হবে, সানকিনি নেমে কঙ্গোনদীর পথ ছেড়ে দক্ষিণ মুখে অজ্ঞাত বনজঙ্গল ও মরুভূমির দেশে প্রবেশ করতে হবে । কাবালে অতি অপরিষ্কার স্থান, কতকগুলো বর্ণসঙ্কর পটুগীজ ও বেলজিয়ামের আড্ডা। স্টেশনের বাইরে পা দিয়েছে এমন সময় একজন পটুগীজ ওর কাছে এসে বললে—হ্যালো,
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।