পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\OV, বিভূতি-রচনাবলী খাওয়া শেষ করে ওরা চলে গেল। চলে যাবার আগে সবাইকে একটা করে সিগারেট দেওয়া হল । ওরা চলে গেলে আলভারেজ বললে—ওরা মাটাবেল জাতির লোক। ভয়ানক দুর্দান্ত, ব্রিটিশ গবর্নমেন্টের সঙ্গে অনেকবার লড়েছে। শয়তানকে ভয় করে না। ওরা সন্দেহ করেছে আমরা ওদের দেশে এসেছি হীরের খনির সন্ধানে। আমরা যে জায়গাটায় আছি, এটা ওদের একজন সর্দারের রাজ্য। কোনো সভ্য গবর্নমেণ্টের আইন এখানে খাটবে না। ধরবে আর নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে মারবে। চলে আমরা তাবু তুলে রওনা হই। শঙ্কর বললে—তবে তুমি বন্দুক আনতে বললে কেন ? ; আলভারেজ হেসে বললে—দ্যাথো, ভেবেছিলুম যদি ওরা খেয়েও না ভোলে, কিংবা কথাবাৰ্ত্তায় বুঝতে পারি যে, ওদের মতলব খারাপ, ভোজনরত অবস্থাতেই ওদের গুলি করবো। এই দ্যাথো রিভলভার পেছনে রেখে তবে খেতে বসেছিলাম। এ কটাকে সাবাড় করে দিতাম। আমার নাম আলভারেজ, আমিও একসময়ে শয়তানকেও ভয় করতুম না, এখনও করি নে। ওদের হাতের মাছ মুখে পৌছোবার আগেই আমার পিস্তলের গুলি ওদের মাথার খুলি উড়িয়ে দিত। আরও পাচ-ছ দিন পথ চলবার পরে একটা খুব বড় পৰ্ব্বতের পাদমূলে নিবিড় ট্রপিক্যাল অরণ্যানীর মধ্যে ওরা প্রবেশ করলে। স্থানটি যেমন নির্জন, তেমনি বিশাল। সে বন দেখে শঙ্করের মনে হল, একবার যদি সে এর মধ্যে পথ হারায়, সারাজীবন ঘুরলেও বার হয়ে আসবার সাধ্য তার হবে না। আল্ভারেজও তাকে সাবধান করে দিয়ে বললে—খুব হুশিয়ার শঙ্কর, বনে চলাফেরা যার অভ্যাস নেই, সে পদে পদে এই সব বনে পথ হারাবে। অনেক লোক বেম্বোরে পড়ে বনের মধ্যে মারা পড়ে। মরুভূমির মধ্যে যেমন পথ হারিয়ে ঘুরেছিলে, এর মধ্যেও ঠিক তেমনিই পথ হারাতে পারে । কারণ এখানে সবই একরকম, এক জায়গা থেকে আর এক জায়গাকে পৃথক করে চিনে নেবার কোনো চিহ্ন নেই। ভাল বুশ ম্যান না হলে পদে পদে বিপদে পড়তে হবে । বন্দুক না নিয়ে এক পা কোথাও যাবে না, এটিও যেন মনে থাকে। মধ্য আফ্রিকার বন শৌখিন ভ্রমণের পার্ক নয়। শঙ্করকে তা না বললেও চলতো, কারণ এসব অঞ্চল যে শখের পার্ক নয়, তা এর চেহারা দেখেই সে বুঝতে পেরেছে। সে জিজ্ঞেস করলে—তোমার সেই হলদে হীরের খনি কতদূরে ? এই তো রিখটারস্ভেল্ড, পৰ্ব্বতমালা, ম্যাপে যতদূর বোঝা যাচ্ছে। আলভারেজ হেসে বললে—তোমার ধারণা নেই বললাম যে। আসল রিখটারস্ভেল্ডের এটা বাইরের থাকৃ। এ রকম আরও অনেক থাকৃ আছে। সমস্ত অঞ্চলটা এত বিশাল যে পুবে সত্তর মাইল ও পশ্চিমদিকে একশো থেকে দেড়শো মাইল পৰ্য্যন্ত গেলেও এ বন ও পাহাড় শেষ হবে না। সর্বনিম্ন প্রস্থ চল্লিশ মাইল। সমস্ত জড়িয়ে আট ন’ হাজার বর্গমাইল সমস্ত রিখটারসভেন্ড, পাৰ্ব্বত্য অঞ্চল ও অরণ্য। এই বিশাল অজানা অঞ্চলের কোনখানটাতে এসেছিলুম আজ সাত আট বছর আগে, ঠিক সে জায়গাটা খুজে বার করা কি ছেলেখেলা, ইয়্যাং ম্যান ?