চাদের পাহাড় ৩৭ শঙ্কর বললে—এদিকে খাবার ফুরিয়েছে, শিকারের ব্যবস্থা দেখতে হয়, নইলে কাল থেকে বায়ুভক্ষণ ছাড়া উপায় নেই। আলভারেজ বললে—কিছু ভেবো না। দেখছে না গাছে গাছে বেবুনের মেলা ? কিছু না মেলে বেবুনের দাপ না ভাজ। আর কফি দিয়ে দিব্যি ব্রেকফাস্ট খাবো কাল থেকে। আজ আর নয়, তাবু ফেল, বিশ্রাম করা যাক। একটা বড় গাছের নীচে র্তাবু খাটিয়ে ওরা আগুন জলিলে। শঙ্কর রান্না করলে, আহারাদি শেষ করে যখন দুজনে আগুনের সামনে বসেছে, তখনও বেলা আছে। আলভারেজ’ কড়, তামাকের পাইপ টানতে টানতে বললে—জানো শঙ্কর, আফ্রিকার এই সব অজানা অরণ্যে এখনও কত জানোয়ার আছে, যার খবর বিজ্ঞানশাস্ত্র রাখে না ? খুব কম সভ্য মহিষ এখানে এসেছে। ওকাপি বলে যে জানোয়ার সে তো প্রথম দেখা গেল ১৯০০ সালে। এক ধরনের বুনো শূওর আছে, যা সাধারণ বুনো শূওরের প্রায় তিনগুণ বড় আকারের। ১৮৮৮ সালে মোজেস্ কাউলে, পৃথিবী পর্য্যটক ও বড় শিকারী, সৰ্ব্বপ্রথম এই বুনো শূওরের সন্ধান পান বেলজিয়াম কঙ্গোর লুয়ালার অরণ্যের মধ্যে। তিনি বহু কষ্টে একটা শিকারও করেন এবং নিউইয়র্ক প্রাণীবিদ্যা সংক্রান্ত মিউজিয়মে উপহার দেন। বিখ্যাত রোডেসিয়ান মনস্টারের নাম শুনেছ ? শঙ্কর বললে—ন, কি সেটা ? —শোন তবে । রোডেসিয়ার উত্তর সীমায় প্রকাণ্ড জলাভূমি আছে। ওদেশের অসভ্য জুলুদের মধ্যে অনেকেই এক অদ্ভুত ধরনের জানোয়ারকে এই জলাভূমিতে মাঝে মাঝে দেখেছে। ওরা বলে তার মাথা কুমীরের মত, গণ্ডারের মত তার শিং আছে, গলাটা অজগর সাপের মত লম্বা ও আঁশওয়ালা, দেহটা জলহস্তীর মত, লেজটা কুমীরের মত। বিরাটদেহ এই জানোয়ারের প্রকৃতিও খুব হিংস্র । জল ছাড়া কখনো ডাঙায় এ জানোয়ারকে দেখা যায় নি। তবে এই সব অসভ্য দেশী লোকের অতিরঞ্জিত বিবরণ বিশ্বাস করা শক্ত। কিন্তু ১৮৮৯ সালে জেম্স্ মার্টিন বলে একজন প্রসপেক্টর রোডেসিয়ার এই অঞ্চলে বহুদিন ঘুরেছিলেন সোনার সন্ধানে। মিঃ মার্টিন আগে জেনারেল ম্যাথিউসের এডিকং ছিলেন, নিজে একজন ভাল ভূতত্ত্ব ও প্রাণীতত্ত্ববিদও ছিলেন। ইনি তার ডায়েরীর মধ্যে রোডেসিয়ার এই অজ্ঞাত জানোয়ার দূর থেকে দেখেছিলেন বলে উল্লেখ করে গিয়েছেন। তিনিও বলেন, জানোয়ারটা আকৃতিতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের ডাইনোসর জাতীয় সরীস্বপের মত ও বেজায় বড়। কিন্তু তিনি জোর করে কিছু বলতে পারেন নি, কারণ খুব ভোরের কুয়াশার মধ্যে কোভিরাণ্ডে হ্রদের সীমানায় জলাভূমিতে আবছায় ভাবে তিনি জানোয়ারটাকে দেখেছিলেন। জানোয়ারটার ঘোড়ার চিহি ডাকের মত ডাক শুনেই তার সঙ্গের জুলু চাকরগুলো উৰ্দ্ধশ্বাসে পালাতে পালাতে বললে – সাহেব পালাও, পালাও, ডিঙ্গোনেকৃ! ডিঙ্গোনেকৃ! ডিঙ্গোনেকৃ ঐ জানোয়ারটার জুলু নাম। দু-তিন বছরে এক অধিবার দেখা দেয় কি না দেয়, কিন্তু সেটা এতই হিংস্ৰ যে তার আবির্ভাব সে দেশের লোকের পক্ষে ভীষণ ভয়ের
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৫০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।