পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী - سياسيا ব্যাপার। মিঃ মার্টিন বলেন, তিনি তার ৩০৩ টোটা গোটা দুই উপরি উপরি ছুড়েছিলেন জানোয়ারটার দিকে। অতদূর থেকে তাকৃ হল না, রাইফেলের আওয়াজে সেটা সম্ভবতঃ জলে ডুব দিলে। o শঙ্কর বললে—তুমি কি করে জানলে এসব ? মিঃ মাটিনের ডায়ের ছাপানো হয়েছিল নাকি ? —না, অনেকদিন আগে বুলাওয়েও ক্রনিকৃল কাগজে মিঃ মার্টিনের এই ঘটনাটা বেরিয়েছিল। আমি তখন সবে এদেশে এসেছি। রোডেসিয়া অঞ্চলে আমিও প্রসপেকৃটিং করে বেড়াতুম বলে জানোয়ারটার বিবরণ আমাকে খুব আকৃষ্ট করে। কাগজখানা অনেকদিন আমার কাছে রেখেও দিয়েছিলুম। তারপর কোথায় হারিয়ে গেল। ওরাই নাম দিয়েছিল জানোয়ারটার—রোডেসিয়ান মনস্টার। শঙ্কর বললে –তুমি কোনে কিছু অদ্ভুত জানোয়ার ছাখে নি ? প্রশ্নটার সঙ্গে সঙ্গে একটা আশ্চর্য্য ব্যাপার ঘটল । তখন সন্ধ্যার অন্ধকার ঘন হয়ে নেমে এসেছে। সেই আবছায়া আলো-অন্ধকারের মধ্যে শঙ্করের মনে হল-হয়তো শঙ্করের ভুল হতে পারে—কিন্তু শঙ্করের মনে হয় সে দেখলে আলভারেজ, দুৰ্দ্ধৰ্ষ ও নির্ভীক আলভারেজ, দুদে ও অব্যর্থলক্ষ্য আলভারেজ ওর প্রশ্ন শুনে চমকে উঠলো—এব”—এবং সেইটাই সকলের চেয়ে আশ্চৰ্য্য—যেন পরক্ষণেই শিউরে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে আলভারেজ যেন নিজের অজ্ঞাতসারেই চারিপাশের জনমানবহীন ঘন জঙ্গল ও রহস্তভরা দুরারোহ পর্বতমালার দিকে একবার চেয়ে দেখলে, কোন কথা বললে না। যেন এই পৰ্ব্বতজঙ্গলে বহুকাল পরে এসে অতীতের কোনো বিভীষিকাময়ী পুরাতন ঘটনা ওর স্মৃতিতে ভেসে উঠেছে, যে স্মৃতিট। ওর পক্ষে খুব প্রতিকর নয়। আলভারেজ ভয় পেয়েছে ! অবাকৃ! আলভারেজের ভয় | শঙ্কর ভাবতেও পারে না। কিন্তু সেই ভয়টা অলক্ষিতে এসে শঙ্করের মনেও চেপে বসলো। এই সম্পূর্ণ অজানা বিচিত্র রহস্যময়ী বনানী, এই বিরাট পৰ্ব্বতপ্রাচীর যেন এক গভীর রহস্তকে যুগ যুগ ধরে গোপন করে আসছে—যে বীর হও, যে নিৰ্ভীক হও, এগিয়ে এসে সে—কিন্তু মৃত্যুপণে ক্রয় করতে হবে সে গহন রহস্তের সন্ধান। রিখটারসভেল্ড, পর্বতমালা ভারতবর্ষের দেবতাত্মা নগাধিরাজ হিমালয় নয়—এদেশের মাসাই, জুলু, মাটাবেল প্রভৃতি আদিম জাতির মতই ওর আত্মা নিষ্ঠুর, বৰ্ব্বর, নরমাংসলোলুপ। সে কাউকে রেহাই দেবে না।