পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ર বিভূতি-রচনাবলী তাদের জানোয়ারদের চীৎকারে বোডিংয়ের ছেলেরা রাত্রে ঘুমুতে পারতে না—শঙ্করের সেই কথা এখন মনে পড়ল। কিন্তু এসবের চেয়েও মধ্যরাত্রে একদল বন্য হস্তীর বৃংহিত ধ্বনি তাবুর অত্যন্ত নিকটে শুনে শঙ্কর এমন ভয় পেয়ে গেল যে, আলুভারেজকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠালে। আলভারেজ বললে—আগুন জলছে তাবুর বাইরে, কোনো ভয় নেই, ওরা ঘোষবে না এদিকে । সকালে উঠে আবার ওপরে ওঠা শুরু। উঠছে, উঠছে—মাইলের পর মাইল বন্য বঁাশের অরণ্য, তার তলায় বুনো আদা। ওদের পথের একশো হাতের মধ্যে র্বাদিকের বাশবনের তলা দিয়ে একটা প্রকাও হস্তীয়ুথ কচি বাশের কোড় মড়মড় করে ভাঙতে ভাঙতে চলে গেল। পাচ হাজার ফুট ওপবে কত কি বন্য পুষ্পের মেলা—টকৃটকে লাল ইরিথি না প্রকাণ্ড গাছে ফুটেছে। পুষ্পিত ইপোমিয়া লতার ফুল দেখতে ঠিক বাংলাদেশের বনকলমী ফুলের মত কিন্তু রঙটা আত গাঢ় বেগুনি নয়। সাদা ভেরোনিক ঘন সুগন্ধে বাতাসকে ভারাক্রান্ত করেছে। বন্য কফির ফুল, রঙীন বেগোনিয়া। মেঘের রাজ্যে ফুলের বন, মাঝে মাঝে সাদা বেলুনের মত মেঘপুঞ্জ গাছপালার মগডালে এসে আটকাচ্ছে—কখনও বা আরও নেমে এসে ভেরোনিকার বন ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্চে । সাড়ে সাত হাজার ফুটের ওপর থেকে বনের প্রকৃতি একেবারে বদলে গেল। এই পৰ্য্যস্ত উঠতে ওদের আরও দু’দিন লেগেছে। আর অসহ কষ্ট, কোমর পিঠ ভেঙে পড়ছে। এখানে বনানীর মূৰ্ত্তি বড় অদ্ভূত, প্রত্যেক গাছের গুড়ি ও শাখাপ্রশাখা পুরু শেওলায় আবৃত, প্রত্যেক ডাল থেকে শেওলা ঝুলছে—সে শেওলা কোথাও কোথাও এত লম্বা যে, গাছ থেকে ঝুলে প্রায় মাটিতে এসে ঠেকৃবার মত হয়েছে—বাতাসে সেগুলো আবার দোল খাচ্ছে, তার ওপর কোথাও স্থৰ্য্যের আলো নেই, সব সময়ই যেন গোধূলি। আর সবটা ঘিরে বিরাজ করছে এক অপার্থিব ধরনের নিস্তব্ধতা—বাতাস বইছে তারও শব্দ নেই পার্থীর কৃজন নেই সে বনে—মানুষের গলার স্বর নেই, কোনো জানোয়ারের ডাক নেই। ষেন কোন অন্ধকার নরকে দীর্ঘশ্মশ্র প্রেতের দলের মধ্যে এসে পড়েছে ওরা । সেদিন অপরাহ্লে যখন আলভারেজ তাবু ফেলে বিশ্রাম করবার হুকুম দিলে—তখন তাবুর বাইরে বসে এক পাত্র কফি খেতে খেতে শঙ্করের মনে হল, এ যেন স্মৃষ্টির আদিম যুগের অরণ্যানী, পৃথিবীর উদ্ভিদজগৎ যখন কোনো একটা স্বনির্দিষ্ট রূপ ও আকৃতি গ্রহণ করে নি, ষে যুগে পৃথিবীর বুকে বিরাটকায় সরীসৃপের দল জগৎজোড়া বনজঙ্গলের নিবিড় অন্ধকারে ঘুরে বেড়াতেী—স্বষ্টির সেই অতীত প্রভাবে সে যেন কোন জাদুমন্ত্রের বলে ফিরে গিয়েছে— সন্ধ্যার পরেই সমগ্র বনানী নিবিড় অন্ধকারে আবৃত হল। তাবুর বাইরে ওরা আগুন করেছে—সেই আলোর মণ্ডলীর বাইরে আর কিছু দেখা যায় না। এ বনের আশ্চৰ্য্য নিস্তব্ধতা শঙ্করকে বিস্মিত করছে। বনানীর সেই বিচিত্র নৈশ শব এখানে স্তন্ধ কেন ? আলভারেজ চিন্তিত মুখে ম্যাপ দেখছিল। বললে—শোনো শঙ্কর, একটা কথা ভাবছি। আট হাজার ফুট উঠলাম, কিন্তু এখনও পৰ্ব্বতের সেই খাজটা পেলাম না যেটা দিয়ে আমরা রেঞ্জ, পার