পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8& বিভূতি-রচনাবলী তাতে ফেরবার সময় তার ঠিক রজার মুখে আগুনের কুণ্ডের অতি নিকটেই একটা পায়ের দাগ দুজনেরই চোখে পড়ল। তিনটে মাত্র আঙ্গুলের দাগ ভিজে মাটির ওপর সম্পষ্ট। এতে প্রমাণ হয়, জানোয়ারটা আগুনকে ডরায় না। শঙ্করের মনে হল, যদি ওদের ঘুম না ভাঙতো, তবে সেই অজ্ঞাত বিভীষিকাটি তাবুর মধ্যে ঢুকতে একটুও দ্বিধা করতে না— এবং তার পর কি ঘটত তা কল্পনা করে কোনো লাভ নেই। আলভারেজ বললে—শঙ্কর, তুমি তোমার ঘুম শেষ করে, আমি জেগে আছি। শঙ্কর বললে—ন, তুমি ঘুমোও আলভারেজ। আলভারেজ ক্ষীণ হাসি হেসে বললে—পাগল, তুমি জেগে কিছু করতে পারবে না, শঙ্কর। ঘুমিয়ে পড়ে, ঐ দেখ দূরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, আবার ঝড়বৃষ্টি আসবে, রাত শেষ হয়ে আসছে, ঘুমোও। আমি বরং একটু কফি খাই। রাত ভোর হবার সঙ্গে সঙ্গে এল মুষলধারে বৃষ্টি, সঙ্গে সঙ্গে তেমনি বিদ্যুৎ, তেমনি মেঘগর্জন। সে বৃষ্টি চলল সমানে সারাদিন, তার বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই। শঙ্করের মনে হল, পৃথিবীতে আজ প্রলয়ের বর্ষণ হয়েছে শুরু, প্রলয়ের দেবতা স্বষ্টি ভাসিয়ে দেবার স্বচনা করেছেন বুঝি। বৃষ্টির বহর দেখে আলভারেজ পর্য্যস্ত দমে গিয়ে তাবু ওঠাবার নাম মুখে আনতে ভুলে গেল । বৃষ্টি থামল যখন, তখন বিকেল পাচট। বোধ হয়, বৃষ্টি না থামলেই ভাল ছিল, কারণ অমনি আলভারেজ চলা শুরু করবার হুকুম দিলে। বাঙালী ছেলের স্বভাবতঃই মনে হয়— এখন অবেলায় যাওয়া কেন ? এত কি সময় বয়ে যাচ্চে ? কিন্তু আলভারেজের কাছে দিন, রাত, বর্ষা, রৌদ্র, জ্যোৎস্না, অন্ধকার সব সমান। সে রাত্রে বর্ষাস্বাত বনভূমির মধ্যে দিয়ে মেম্বভাঙা জ্যোৎস্নার আলোয় দুজনে উঠছে, উঠছে—এমন সময় আলভারেজ পেছন থেকে বলে উঠল—শঙ্কর দাড়াও ঐ দেখ— আলভারেজ ফিল্ড গ্লাস দিয়ে ফুটফুটে জ্যোৎস্নালোকে বঁ। পাশের পর্বতশিখরের দিকে চেয়ে দেখছে। শঙ্কর ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে। হ্যা, সমতল খাজটা পাওয়া গিয়েছে। বেশী দূরেও নয়, মাইল দুইয়ের মধ্যে, বাদিক ঘেষে। আলভারেজ হাসিমুথে বললে—দেখেছ স্যাডল্টা ? থামবার দরকার নেই, চল আজ রাত্রেই স্তাড়লের ওপর পৌছে তাবু ফেলবো। শঙ্কর আর সত্যিই পারছে না। এ দুৰ্দ্ধৰ্ষ পটুগিজ টার সঙ্গে হীরার সন্ধানে এসে সে কি ঝকৃমারি না করেছে । শঙ্কর জানে অভিযানের নিয়মানু্যায়ী দলপতির হুকুমের ওপর কোনো কথা বলতে নেই। এখানে আলভারেজই দলপতি, তার আদেশ অমান্য করা চলবে না। কোথাও আইনে লিপিবদ্ধ না থাকলেও, পৃথিবীর ইতিহাসের বড় বড় অভিধানে সবাই এই নিয়ম মেনে চলে। সেও মানবে। অবিশ্রাস্ত হাটবার পরে স্বর্য্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ওরা এসে স্তাড়লে যখন উঠল—শঙ্করের তখন আর এক পাও চলবার শক্তি নেই। তাড় লটার বিস্তৃতি তিন মাইলের কম নয়, কখনো বা দুশে ফুট খাড় উঠছে, কখনো বা