চাদের পাহাড় 8忘 রার বাতাস এমনি বেশ স্বগন্ধ বহন করে, কিন্তু নিঃশ্বাসের সঙ্গে বেশী মাত্রায় গ্রহণ করলে, অনেক সময় পক্ষাঘাত পৰ্য্যন্ত হতে পারে, মৃত্যু ঘটাও আশ্চৰ্য্য নয়। তাবুতে এসে শঙ্কর দু-তিন দিন শয্যাগত হয়ে রইল। সৰ্ব্বশরীর ফুলে ঢোল। মাথা যেন ফেটে যাচ্ছে আর সর্বদাই তৃষ্ণায় গল কাঠ। আলভারেজ বলে—যদি তোমাকে সার রাত ওখানে থাকতে হতো–তা হলে সকালবেলা তোমাকে বাচানো কঠিন হতো। একদিন একটা ঝরনার জলধারার বালুময় তীরে শঙ্কর হলদে রঙের কি দেখতে পেলে । আলভারেজ পাকা প্রসপেক্টর, সে এসে বালি ধুয়ে সোনার রেণু বার করলে—কিন্তু তাতে সে বিশেষ উৎসাহিত হল না । সোনার পরিমাণ এত কম যে মজুরি পোষাবে না—এক টন বালি ধুয়ে আউন্স তিনেক সোনা পাওয়া হয়তো যেতে পারে। শঙ্কর বললে—বসে থেকে লাভ কি, তবু যা সোন পাওয়া যায়, তিন আউন্স সোনার দামও তো কম নয় ! সে যেটাকে অত্যন্ত অদ্ভুত জিনিস বলে মনে করেছে, অভিজ্ঞ প্রসপেক্টর আলভারেজের কাছে সেটা কিছুই নয়। তা ছাড়া শঙ্করের মজুরির ধারণাব সঙ্গে আলভারেজের মজুরির ধারণা মিল খায় না । শেষ পর্য্যস্ত ও কাজ শঙ্করকে ছেড়ে দিতে হোল । ইতিমধ্যে ওরা মাসখানেক ধরে জঙ্গলের নানা অঞ্চলে বেডালে। আজ এখানে দু’দিন তাবু পাতে, সেখান থেকে আর এক জায়গায় উঠে যায়, সেখানে কিছুদিন তন্ন তন্ন করে চারিধার দেখবার পরে আর এক জায়গায় উঠে যায়। সেদিন অরণ্যের একটা স্থানে ওরা নতুন পৌছে তাবু পেতেছে। শঙ্কর বন্দুক নিয়ে দু-একটা পাখী শিকার করে সন্ধ্যায় তাবুতে ফিরে এসে দেখলে, আলভাবেজ বসে চুরুট টানছে, তার মুখ দেখে মনে হল সে উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত । শঙ্কর বললে—আমি বলি আলভারেজ, তুমিই যখন বার করতে পারলে না, তখন চলে৷ ফিরি। আলভারেজ বললে—নদীটী তো উড়ে যায় নি, এই বন পৰ্ব্বতের কোনো না কোনো অঞ্চলে সেটা নিশ্চয়ই আছে। —তবে আমরা বার করতে পারছি নে কেন ? —আমাদের খোজা ঠিকমত হচ্ছে না। —বল কি আলভারেজ, ছ'মাস ধরে জঙ্গল চষে বেড়াচ্ছি, আবার কাকে খোজা বলে ? আলভারেজ গম্ভীর মুখে বললে—কিন্তু মুশকিল হয়েছে কোথায় জানো, শঙ্কর ? তোমাকে এখনও কথাটা বলি নি, শুনলে হয়তো খুব দমে যাবে বা ভয় পাবে। আচ্ছা, তোমাকে একটা জিনিস দেখাই, এসো আমার সঙ্গে । শঙ্কর অধীর আগ্রহ ও কৌতুহলের সঙ্গে ওর পেছনে পেছনে চললো। ব্যাপারটা কি ? আলভারেজ একটু দূরে গিয়ে একটা বড় গাছের তলায় দাড়িয়ে বললে—শঙ্কর, আমরা আজই এখানে এসে তাবু পেতেছি, ঠিক তো ?
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৬২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।