পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আট মাঝ রাত্রে শঙ্করের ঘুম ভেঙে গেল। কি একট। শব্দ হচ্ছে ঘন বনের মধ্যে, কি একটা কাণ্ড কোথায় ঘটছে বনে। আলভারেজও বিছানায় উঠে বসেছে। দুজনেই কান-খাড়া করে শুনলে—বড় অদ্ভুত ব্যাপার! কি হচ্ছে বাইরে ? শঙ্কর তাড়াতাড়ি টর্চ জেলে বাইরে আসছিল, আলভারেজ বারণ করলে। বললে— এসব অজানা জঙ্গলে রাত্ৰিবেল ওরকম তাড়াতাড়ি তার বাইরে ঘেও না, তোমাকে অনেকবার সতর্ক করে দিয়েছি। বিনা বন্দুকেই বা যাচ্ছ কোথায় ? র্তাবুর বাইরে রাত্রির যুটফুটে অন্ধকার। দুজনেই টর্চ ফেলে দেখলে— বন্য জন্তুর দল গাছপালা ভেঙে উৰ্দ্ধশ্বাসে উন্মত্তের মত দিকৃবিদিকৃ জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে পশ্চিমের সেই ভীষণ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে, পূবদিকে পাহাড়টার দিকে চলেছে। হায়েনা, বেবুন, বুনো মহিয। দুটো চিতাবাঘ তো ওদের গা ঘেষে ছুটে পালালো। আরও আসছে ...দলে দলে আসছে- ধাড়ী ও মাদী কলোবাস বঁাদর দলে দলে ছানাপোনা নিয়ে ছুটেছে। সবাই যেন কোনো আকস্মিক বিপদের মুখ থেকে প্রাণের ভয়ে ছুটছে ...আর সঙ্গে সঙ্গে দূরে কোথায় একটা অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে—চাপা, গম্ভীর, মেঘগর্জনের মত শব্দটা—কিংবা দূরে কোথাও হাজারটা জয়ঢাক যেন একসঙ্গে বাজছে ! ব্যাপার কি ! দুজনে দুজনের মুখের দিকে চাইলে । দুজনেই অবাকৃ। আলভারেজ বললে—শঙ্কর, আগুনটা ভাল করে জালো—নয়তো বন্যজস্তব দল আমাদের তাবুস্থদ্ধ ভেঙে মাড়িয়ে চলে যাবে। জন্তুদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলল যে ! মাথার ওপরেও পার্থীর দল বাসা ছেড়ে পালাচ্ছে । প্রকাণ্ড একটা স্প্রিংবকৃ হরিণের দল ওদের দৃশগজের মধ্যে এসে পডল। কিন্তু ওরা দুজনে তখন এমন হতভম্ব হয়ে গিয়েছে ব্যাপার দেথে যে, এত কাছে পেয়েও গুলি করতে ভুলে গেল। এমন ধরনের দৃশু ওরা জীবনে কখনো দেখে নি । শঙ্কর আলভারেজকে কি একটা জিজ্ঞাসা করতে যাবে, তার পরেই—প্ৰলয় ঘটল। অস্তত: শঙ্করের তো তাই বলেই মনে হলো । সমস্ত পুথিবীটা দুলে এমন কেঁপে উঠল যে, ওরা দুজনেই টলে পড়ে গেল মাটিতে, সঙ্গে সঙ্গে হাজারটা বাজ যেন নিকটেই কোথায় পড়ল। মাটি যেন চিরে ফেড়ে গেল—আকাশটাও যেন সেই সঙ্গে ফাটলো। f আলভারেজ মাটি থেকে ওঠবার চেষ্টা করতে করতে বললে—ভূমিকম্প ! কিন্তু পরক্ষণেই তারা দেখে বিম্মিত হল, রাত্রির অমন ঘুটফুটে অন্ধকার হঠাৎ দূর হয়ে, পঞ্চাশ হাজার বাতির এমন বিজলি আলো জলে উঠল কোথা থেকে ! তারপর তাদের নজর পড়ল, দূরের সেই পাহাড়ের চূড়াটার দিকে। সেখানে যেন একটা প্রকাগু অগ্নিলীলা শুরু হয়েছে। রাঙা হয়ে উঠেছে সমস্ত দিগস্ত সেই প্রলয়ের আলোয়, আগুন-রাঙা মেঘ ফুসিয়ে উঠছে পাহাড়ের চড়ো থেকে দু-হাজার আড়াই