পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qや বিভূতি-রচনাবলী তাবুর বাইরে হঠাৎ যেন পায়ের শব্দ পাওয়া গেল। শঙ্কর প্রথমটা ভাবলে, আল্ভারেজ গাছ থেকে নেমে ফিরে আসছে বোধ হয়—কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হল, এ মানুষের স্বাভাবিক পায়ের শব্দ নয়, কেউ দু-পায়ে থলে জড়িয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে মাটিতে পা ঘষে ঘষে টেনে টেনে চললে যেন এমন ধরনের শব্দ হওয়া সম্ভব। আলভারেজের উইনচেস্টার রিপিটারটা হাতের কাছেই ছিল, ও সেটা তাবুর দরজার দিকে বাগিয়ে বসলো। বাইরে পদশব্দটা একবার থেমে গেল—পরেই আবার তাবুর দক্ষিণ পাশ থেকে বাদিকে এল। একটা কোনো বন্ড প্রাণীর যেন ঘন ঘন নিঃশ্বাসের শবা পাওয়া গেল—ঠিক যেমন পৰ্ব্বতি পার হবার সময় এক রাত্রে ঘটেছিল, ঠিক এই রকমই । শঙ্কর একটু ভয় খেয়ে সংযম তারিয়ে ফেলে রাইফেল ছুডে বসলে । একবার. জুবার-- 影 সঙ্গে সঙ্গে মিনিট দুই পবে দূরের গাছের মাথা থেকে প্রত্যুত্তরে দুবার রিভলভারের আওয়াজ পাওয়া গেল। আল্ভারেজ মনে ভেবেছে, শঙ্করের কোনো বিপদ উপস্থিত, নতুবা রাত্রে গামোক বন্দুক ছডবে কেন ? বোধ হয় সে তাড়াতাডি নেমেই আসছে। এদিকে চারিদিক থেকে বন্দুকের আওয়াজে জানোয়ারটা বোধ হয় পালিয়েছে, আর তার সাড়াশক নেই। শঙ্কর টর্চ জেলে তাবুর বাইরে এসে ভাবলে, আলভারেজকে সঙ্কেতে গাছ থেকে নামতে পারণ করবে, এমন সময় কিছুদূরে বনের মধ্যে হঠাৎ আবার দুবার পিস্তলের আওয়াজ এবং সেই সঙ্গে একটা অস্পষ্ট চীংকার শুনতে পাওয়া গেল । শঙ্কর পিস্তলের আওয়াজ লক্ষ্য করে ছুটে গেল। কিছুদূরে গিযেই দেখলে বনের মধ্যে একটা বড় গাছের তলায় আলভারেজ শুয়ে। টর্চের আলোয় তাকে দেখে শঙ্কর শিউরে উঠল ভয়ে বিস্ময়ে—তার সর্বশরীর রক্তমাখা, মাথাটা লাকী শরীরের সঙ্গে একটা অস্বাভাবিক কোণের স্বষ্টি করেছে, গায়ের কোটটা ছিন্নভিন্ন। শঙ্কর তাড়াতাডি ওর পাশে গিয়ে বসে ওর মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিলে। ডাকলে —আলভারেজ ! আলভারেজ । আলভারেজের সাডা নেই। তার ঠোট দুটো একবার যেন নড়ে উঠল, কি যেন বলতে গেল ; সে শঙ্করের দিকে চেয়েই আছে, অথচ সে চোখে যেন দৃষ্টি নেই ; অথবা কেমন যেন নিম্পূহ, উদাস দৃষ্টি। শঙ্কর ওকে বহন করে তাবুতে নিয়ে এল। মুখে জল দিল, তার পর গায়ের কোটটা খুলতে গিয়ে দেখে, গলার নীচে কাধের দিকে খানিকটা জায়গার মাংস কে যেন ছিড়ে নিয়েছে। সারা পিঠটার সেই অবস্থা। কোন এক অসাধারণ বলশালী জন্তু তীক্ষুধার নখে বা দন্তে পিঠখান চিরে ফালা ফাল করেছে। পাশেই নরম মাটিতে কোনো জন্তু পায়ের দাগ । তিনটে মাত্র আঙ্গুল সে পায়ে। সারারাত্রি সেই ভাবেই কাটল, আলভারেজের সাড়া নেই, সংজ্ঞা নেই। সকাল হবার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ যেন তার চেতনা ফিরে এল। শঙ্করের দিকে বিস্ময়ের ও অচেনার দৃষ্টিতে