पूरुि গুণ-জ্ঞানের সব সম্মান, সবু অভিমান খুলে ফেলে দিয়ে মানব-চেতনার একেবারে মূলে যদি পৌছনো যায়, দেখা যাবে সেইখানেই শিশু-সাহিত্য দানা বাধছে। এ যে-সে লেখকের কর্ম নয়। অতি দক্ষ যে রবীন্দ্রনাথ, তিনিও এ ব্যাপারে ততখানি সাফল্য লাভ করেন নি, যতখানি করেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর, অবনীন্দ্রনাথ, স্বকুমার। বিভূতিভূষণও এদের দলের, যদিও সবাই কিছু সমান ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না। তবু যেমন করেই হক ছোটদের জন্য সাহিত্য রচনার মূল মন্ত্রীদের সবার জানা ছিল। গোড়া থেকেই অস্থবিধা । দেখতে হবে মুকুমার স্বনির্মল চোখ দিয়ে, অথচ লিখতে হবে এমন পাকা হাতে যে একটি বাড়তি কথার প্রয়োজন হবে না, এইটুকু বাক-চাতুরির সাহায্য লাগবে না। এ ধরণের লেখার উদ্দেশু শুধুই শিক্ষা-দানের চেয়ে অনেক বড়। এর ফলে ছোট ছেলেদের মনের পাপড়িগুলি একে একে খুলে যায় আর নির্মল অরুণালোক অন্তরকে স্পর্শ করে। কোনো অধীত বিদ্যা দিয়ে, কোনো গভীর অভিজ্ঞতা দিয়ে এ বিদ্যা লাভ করা যায় না। এই নিয়ে কেউ জন্মায়, কেউ জন্মায় না। যে এ গুণ নিয়ে জন্মায় না, সে যে হাজার তপস্যা করেও তাকে আয়ত্ত করতে পারে না, তার শত শত শোচনীয় প্রমাণ, একটু তাকালেই সব ভাষায় দেখতে পাওয়া যায়, খুজতেও হয় না। এ ক্ষেত্রে অনেক প্রতিতাবান সাহিত্যিকও হতাশ হয়েছেন । তাদের কথা ছেড়েই দিলাম যারা সরলভাবে বিশ্বাস করে যে বড়দের জন্য বই লেখা ব্যাপারে, কড়ি না পেলেও, ছোটরা অত বোঝে-সেবে না, তাদের ক্ষেত্রে কোমর বেঁধে নেমে পড়া যায়। হাত-ও পাকবে, নাম-ও হবে—আর ঘরে দু’পয়সা এলে তো আরো ভালো ! কিন্তু ঐ যে মানব-চেতনার মূলের কথা বলা হল, সেখানে অনুকৃত, কৃত্রিম, বা চেষ্টা-করে খাড়া-করা কোনো কিছুর জায়গা নেই । সেখানে কেমন একটা সহজ, আদিম, প্রাথমিক ভাব থাকে যে খাটি জিনিস ছাড়া কিছু নেয় না । সেখানে ভদ্রতার আড়াল বলেও কিছু নেই ; যাকে যেমন দেখা যায়, তাকে ঠিক তেমনি করেই দেখানো হয়। খুব যে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিচার করা হয়, তাও নয়। কারণ থাটি জিনিস ছাড়া সেখানে কিছু থাকার কথাই নয়। অবিপ্তি গল্প কাহিনীর চরিত্রদের মধ্যে অনেক ভুলচুক, দোষ-দুর্বলতা পার পেয়ে যায়, কারণ ন্যায়-অন্যায়ের মান সেখানে আলাদা। সেখানে যে-সব মন্দ লোকদের ক্ষমা করা হয়, তারা বাইরে মন্দ হলেও হৃদয়ে মন্দ নয়। সেখানকার নিয়মে ধারা দুঃখী তারা কখনো একেবারে মন্দ হতে পারে না । অনিয়মের রাজ্য নয় সেটা ; ছোটদের মনে এক ধরণের পরিচ্ছন্নতা বিরাজ করে । স্বজনের কাজ চলে সেখানে, মানুষের ছেলেমেয়েদের মন তৈরী হয়, খেলো অকেজে কিছু থাকলে চলবে কেন। ছোটর যা দিয়ে দণ্ডে দণ্ডে পলে পলে বড় হবে, হাতে পায়ে শক্তি,
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।