পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাদের পাহাড় & চেয়ে দেখলে, যেন এর আগে সে কখনো শঙ্করকে দেখে নি। তার পরে আবার চোখ বুজস । দুপুরের পর খুব সম্ভবতঃ নিজের মাতৃভাষায় কি সব সকতে শুরু করল, শঙ্কর এক বর্ণও বুঝতে পারলে না।. বিকেলের দিকে সে হঠাৎ শঙ্করের দিকে চাইলে । চাইবার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্করের মনে হল, সে ওকে চিনতে পেবেছে । এইবার ইংরেজীতে বললে—শঙ্কর । এখনও বসে আছ ? তাবু ওঠাও—চল যাই— । তার পর অপ্রকৃতিস্থের মত নির্দেশহীন ভঙ্গিতে হাত তুলে বললে—রাজার ঐশ্বৰ্য্য লুকোনো রয়েছে ঐ পাহাড়ের গুষ্ঠার মধ্যে— তুমি দেখতে পাচ্ছ না—আমি দেখতে পাচ্ছি। চল আমব যাই—তাবু ওঠাও—দেরি কোরো না | s এই আলভারেজের শেষ কথা। 岑 赛 γκ- 瑛 তার পর কতক্ষণ শঙ্কর স্তব্ধ হয়ে বসে রইল । সন্ধ্যা হল, একটু একটু করে সমগ্র বনানী ঘন অন্ধকারে ডুবে গেল। শঙ্করের তখন চমক ভাঙল। সে তাড়াতাড়ি উঠে আগে আগুন আললে, তার পর দুটো রাইফেলে টোটা ভরে, তাবুর দোরের দিকে বন্দুকের নল বাগিয়ে, আলভারেজের মৃতদেহের পাশে একখানা শতরঞ্জির ওপর বসে রইল । তার পর সে রাত্রে আবার নামলো তেমনি ভীষণ বর্ষ। তাবুর কাপড় ফুড়ে জল পডে জিনিসপত্র ভিজে গেল। শঙ্কর তখন কিন্তু এমন হয়ে গিয়েছে যে, তার কোন দিকে দৃষ্টি নেই। এই ক'মাসে সে আলভারেজকে সত্যিই ভালবেসেছিল, তার নির্ভীকতা, তার সঙ্কল্পে অটলত, তার পরিশ্রম করবার অসাধারণ শক্তি, তাব পীরত্ব - শঙ্করকে মুগ্ধ করেছিল। সে আলভারেজকে নিজের পিতার মত ভালবাসতে। আলভারেজও তাকে তেমনি স্নেহের চোখেই দেথতে । কিন্তু এসবের চেয়েও শঙ্করের মনে হচ্ছে বেশী যে, আলভারেজ মারা গেল শেষকালে সেই অজ্ঞাত জানোয়ারটারই হাতে। ঠিক জিম্ কার্টারের মতই। রাত্রি গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমে তার মন ভয়ে আকুল হয়ে উঠল । সম্মুখে ভীষণ অজানা মৃত্যুদূত—ঘোর রহস্যময় তার অস্তিত্ব। কখন সে আসবে, কখন বা যাবে, কেউ তার সন্ধান দিতে পারবে না। ঘুমে ঢুলে না পড়ে, শঙ্কর মনের বলে জেগে বসে রইল সারা রাত। ও সে কি ভীষণ রাত্রি । যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন এ রাত্রির কথা সে ভুলবে না । গাছে গাছে, ডালে ডালে, হাজারধারায় বৃষ্টি-পতনের শব্দে ও একটানা ঝড়ের শব্দে অরণ্যানীর অন্য সকল নৈশ শবকে আজ ডুবিয়ে দিয়েছে, পাহাড়ের ওপর বড় গাছ মড়, মড় করে ভেঙে পড়ছে । এই ভয়ঙ্কর রাত্রিতে সে একা এই ভীষণ অরণ্যানীর মধ্যে ! কালো গাছের গুড়িগুলো যেন প্রেতের মত দেখাচ্ছে, অত বড় বৃষ্টিতেও জোনাকির ব্যাক জলছে। সম্মুখে বন্ধুর মৃতদেহ । ভয় পেলে চলবে না। সাহস আনতেই হবে মনে, নতুবা ভয়েই সে মারা বাবে । সাহস আনবার প্রাণপণ চেষ্টায় সে রাইফেল দুটির দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করলে ।