পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీలీ বিভূতি-রচনাবলী দিয়ে দোলনায় উঠে আক্রমণ করবে। চিতাবাঘ অতি ধূৰ্ত্ত জানোয়ার। কাজেই সারারাত্রি শঙ্কর চোখের পাতা বোজাতে পারলে না । তার ওপর চারিধারে নানা বন্য জন্তুর রব। একবার একটু তন্দ্র এসেছিল, হঠাৎ কাছেই কোথাও একদল বালকবালিকার খিলখিল হাসির রবে তন্ত্রা ছুটে গিয়ে ও চমকে জেগে উঠল । ছেলেমেয়ের হাসে কোথায় ? এই জনমানবীন অরণ্যে বালকবালিকাদের যাতায়াত করা বা এত রাত্রে হাসা উচিত নয় তো ? পরক্ষণেই তার মনে পড়ল একজাতীয় বেবুনের ডাক ঠিক ছেলেপুলের হাসির মত শোনায়, আলভারেজ একবার গল্প করেছিল। প্রভাতে সে গাছ থেকে নেমে রওনা হল। বৈমানিকেরা যাকে ললেন 'ফ্লাইং ব্লাইণ্ড –সে এইভাবে বনের মধ্যে দিয়ে চলেছে, সম্পূর্ণ ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে, দু চোখ বুজে। এই দুদিন চলেই সে সম্পূর্ণভাবে দিগভ্ৰাস্ত হয়ে পড়েছে—আর তার উত্তর দক্ষিণ পূব পশ্চিম জ্ঞান নেই। সে বুঝলে কোনো মহারণ্যে দিক ঠিক রেগে চলা কি ভীষণ কঠিন ব্যাপার ! তোমার-চারিপাশে সল সময়েই গাছের গুড়ি, অগণিত, অজস্ৰ, তার লেখাজোঁথা নেই। তোমার মাথার ওপর সব সময় ডালপালা লতাপাতার চন্দ্ৰাতপ । নক্ষত্র, চন্দ্র, সূৰ্য্য দৃষ্টিগোচর হয় না। সূর্য্যের আলোও কম, সব সময়েই যেন গোধূলি। ক্রোশের পর ক্রোশ যাও, ঐ একই ব্যাপার। এদিকে কম্পাস অকেজে, কি করে দিক ঠিক রাখা যায় ? 赛 兴 赛 譽 পঞ্চম দিনে একটা পাহাড়ের তলায় এসে সে বিশ্রামের জন্যে থামল। কাছেই একটা প্রকাগু গুহার মুখ, একটা ক্ষীণ জলশোত গুহার ভেতর থেকে বেরিয়ে বনের মধ্যে একে বেঁকে অদৃত হয়েছে। অত বড় গুহ। কখনো না দেখার দরুন, একটা কৌতুহলের বশবর্তী হয়েই সে জিনিসপত্র বাইরে বেগে গুহার মধ্যে ঢুকলে। গুহার মূপে খানিকট আলো—ভেতরে বড় অন্ধকার, টার্চ জেলে সস্তৃপণে অগ্রসর হয়ে, সে ক্রমশ: এমন এক জায়গায় এসে পৌছুলো, যেখানে ডাইনে বঁায়ে আর দুটাে মুখ । ওপরের দিকে টর্চ উঠিয়ে দেখলে, ছাদটা অনেকট উচু। সাদা শক্ত তুনের মত ক্যালসিয়াম কাব্বের্ণনেটের সরু মোট ঝুরি ছাদ থেকে ঝাড়লন্ঠনের মত ঝুলছে। গুহার দেওয়ালগুলো ভিজে, গা বেয়ে অনেক জায়গায় জল খুব ক্ষীণধারায় ঝরে পড়ছে। শঙ্কর ডাইনের গুহায় ঢুকলে, সেটা ঢুকবার সময় সরু, কিন্তু ক্রমশঃ প্রশস্ত হয়ে গিয়েছে। পায়ে পাথর নয়, ভিজে মাটি । টর্চের আলোয় গুর মনে হল, গুহাটা ত্রিভুজাকৃতি। ত্রিভুজের ভূমির এক কোণে আর একটা গুহামুখ। সেটা দিয়ে ঢুকে শঙ্কর দেখলে সে যেন দুধারে পাথরের উচু দেওয়াল-ওয়াল একটা সংকীর্ণ গলির মধ্যে এসেছে। গলিটা আঁকাবঁাকা, একবার ডাইনে একবার বায়ে সাপের মত একে-বেঁকে চলেছে—শঙ্কর অনেক দূর চলে গেল গলিটা ধরে। ঘণ্টা দুই এতে কাটলো। তার পর সে ভাবলে, এবার ফেরা যাকৃ। কিন্তু ফিরতে গিয়ে