পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাদের পাহাড় لا يا সে আর কিছুতেই সেই ত্রিভূজাকৃতি গুহাটা খুজে পেল না। কেন, এই তো সেই গুহা থেকেই এই সরু গুহাটা বেরিয়েছে, সরু গুহা তো শেষ হয়েই গেল—তবে সে ত্রিভুজ গুহা কৈ ? 發 অনেকক্ষণ খোজাখুজির পর শঙ্করের হঠাৎ কেমন আতঙ্ক উপস্থিত হল। সে গুহার পথ হারিয়ে ফেলে নি তো ? সৰ্ব্বনাশ ! সে বসে আতঙ্ক দূর করবার চেষ্টা করলে, ভাবলে—ন, ভয় পেলে তার চলবে না। স্থির বুদ্ধি ভিন্ন এ বিপদ থেকে উদ্ধারের উপায় নেই। মনে পডল, আলভারেজ তাকে বলে দিয়েছিল, অপরিচিত স্থানে বেশীদূর অগ্রসর হবার সময়ে পথের পাশে সে যেন কোন চিহ্ন রেখে যায়, যাতে আবার সেই চিহ্ন ধরে ফিরতে পারে। এ উপদেশ সে ভুলে গিয়েছিল । এখন উপায় ? টর্চের আলো জালতে তার আর ভরস। হচ্ছে না। যদি ব্যাটারি ফুরিয়ে যায়, তবে নিরুপায়। গুহার মধ্যে অন্ধকার সূচীভেদ্য । সেই জুনিরীক্ষা অন্ধকারে এক পা অগ্রসর হওয়া অসম্ভব। পথ খুজে বার করা তো দূরের কথা। সারাদিন কেটে গেল—ঘডিতে সন্ধ্যা সাতটা | এদিকে টর্চের আলো রাঙা হয়ে আসছে ক্রমশঃ । ভীষণ গুমট গরম গুহার মধ্যে, তা ছাড়া পানীয় জল নেই। পাথরের দেওয়াল বেয়ে যে জল চুয়ে পড়ছে, তার আস্বাদ-কষা, ক্ষার, ঈষৎ লোনা। তার পরিমাণও বেশী নয়। জিব দিয়ে চেটে খেতে হয় দেওয়ালের গা থেকে । বাইরে অন্ধকার হয়েছে নিশ্চয়ই, সাড়ে সাতটা বাজলে । আটটা, নট, দশটা। তখনও শঙ্কর পথ হাতড়াচ্ছে—টর্চের পুরোনো ব্যাটারি জলছে সমানে বেলা তিনটে থেকে, এইবার সে এত ক্ষীণ হয়ে এসেছে যে, শঙ্কর ভয়ে আরও উন্মাদের মত হয়ে উঠল। এই আলো যতক্ষণ, তার প্রাণের ভরসাও ততক্ষণ-নতুবা এ রৌরব নরকের মত মহা অন্ধকারে পথ খুঁজে পাবার কোনো আশা নেই—স্বয়ং আলভারেজও পারতো না। টর্চ নিবিয়ে ও চুপ করে একখানা পাথরের ওপর বসে রইল। এ থেকে উদ্ধার পাওয়৷ যেতেও পারতো, যদি আলো থাকতো—কিন্তু অন্ধকারে সে কি করে এখন ? একবার ভাবলে, রাত্রিটা কাটুক না, দেখা যাবে এখন। পরক্ষণেই মনে হল—তাতে আর কি স্ববিধে হবে ? এখানে দিন রাত্রি সমান। অন্ধকারেই সে দেওয়াল ধরে ধরে চলতে লাগলো-হায়, হায়, কেন গুহায় ঢুকবার সময় দুটাে নতুন ব্যাটারি সঙ্গে নেয় নি! অন্ততঃ একটা দেশলাই ! ঘড়ি হিসেবে সকাল হল। গুহার চির অন্ধকারে আলো জললো না। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় শরীর অবসন্ন হয়ে আসছে ওর। বোধ হয়, এই গুহার অন্ধকারে ওর সমাধি অদৃষ্টে লেখা আছে, দিনের আলো আর দেখতে হবে না। আলভারেজের বলি গ্রহণ করে আফ্রিকার রক্তত্বষ্ণা মেটে নি, তাকেও চাই। তিন দিন তিন রাত্রি কেটে গেল। শঙ্কর জুতোর স্বকতোলা চিবিয়ে খেয়েছে, একটা