©8 বিভূতি-রচনাবলী অনেকগুলো ফেকৃড়ি বেরিয়েছে। প্রত্যেক সংযোগ-স্থলে ও কুড়ি সাজিয়ে একটা ‘S’ অক্ষর তৈরী করে রাখলে। অনেকগুলো স্রোতশাখা আবার ঘুরে শঙ্কর যেদিক থেকে এসেছিল, সেইদিকেই যেন ঘুরে গেল। পথে চিহ্ন না রেখে গিয়েই শঙ্করের মাথা গোলমাল হয়ে যাবার যোগাড় হল । একবার শঙ্করের পায়ে খুব ঠাণ্ডা কি ঠেকতেই, সে আলো জেলে দেখলে, জলের ধারে এক প্রকাগুকায় অজগর পাইথন কুগুলী পাকিয়ে আছে। পাইথন ওর স্পর্শে আলস্য পরিত্যাগ করে মাথাটা উঠিয়ে কড়ির দানার মত চোখে চাইতেই টর্চের আলোয় দিশাহারা হয়ে গেল—নতুবা শঙ্করের প্রাণ-সংশয় হয়ে উঠতো। শঙ্কর জানে অজগর সর্প অতি ভয়ানক জন্তু —বাঘ সিংহের মুখ থেকেণ্ড হয়৩ে। পরিত্রাণ পাওয যেতে পারে, অজগর সপের নাগপাশ থেকে উদ্ধার পাওয়| অসম্ভব । একটিবার লেজ ছুডে পা জড়িয়ে ধরলে আর দেখতে হতো না । এবার অন্ধকারে চলতে ওর ভয়ানক ভয় করছিল। কি জানি, আবার কোথায় কোন পাইথন সাপ কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে ! দুটে তিনটে স্রোতশাখা পরীক্ষা করে দেখবার পরে ও তার কৃত চিহ্নের সাহায্যে পুনরায় সংযোগস্থলে ফিরে এল। প্রধান সংযোগস্থলে ও কুড়ি দিয়ে একটা ক্রুশচিহ্ন করে রেখে গিয়েছিল। এবার ওরই মধ্যে যেটাকে প্রধান বলে মনে হল, সেটা ধরে চলতে গিয়ে দেখলে সেও সোজামুখে যায় নি। তারও নানা ফেকৃড়ি বেরিয়েছে কিছুদূরে গিয়েই। এক-এক জায়গায় গুহার ছাদ এত নীচু হয়ে নেমে এসেছে যে কুঁজে হয়ে, কোথাও বা মাজা দুমড়ে, অশীতিপর বুদ্ধের ভঙ্গিতে চলতে হয়। হঠাৎ এক জায়গায় টর্চ জেলে সেই অতি ক্ষীণ আলোতেও শঙ্কর বুঝতে পারলে, গুহাট। সেখানে ত্রিভূজাকৃতি—সেই ত্রিভূজ গুহা, যাকে খুজে বার না করতে পেরে, মৃত্যুর দ্বার পর্য্যন্ত যেতে হয়েছিল। একটু পরেই দেখলে বহুদূরে যেন অন্ধকারের ফ্রেমে আঁটা কযেকটি নক্ষত্র জলছে। গুহার মুখ । এবার আর ভয় নেই। এ-যাত্রার মত সে বেঁচে গেল।
- 鼻 学 素 শঙ্কর যখন বাইরে এসে দাড়াল, তখন রীত তিনটে । সেখানটায় গাছপালা কিছু কম, মাথার ওপর নক্ষত্রভরা আকাশ দেখা যায়। রৌরবের মহা অন্ধকার থেকে বার হয়ে এসে রাত্রির নক্ষত্রালোকিত স্বচ্ছ অন্ধকার তার কাছে দীপালোকখচিত নগরপথের মত মনে হল। প্রাণভরে সে ভগবানকে ধন্যবাদ দিলে, এ অপ্রত্যাশিত মুক্তির জন্তে । 桑
ভোর হল । সুৰ্য্যের আলো গাছের ডালে ডালে ফুটুলো। শঙ্কর ভাবলে এ অমঙ্গলজনক স্থানে আর একদণ্ডও সে থাকবে ন! ৷ পকেটে একখানা পাথরের কুড়ি তখনও ছিল, ফেলে না দিয়ে গুহার বিপদের স্মারক স্বরূপ সেখানা সে কাছে রেখে দিলে। পরদিন এলিফ্যান্ট, ঘাস দেখা গেল বনের মধ্যে, সেদিনই সন্ধ্যার পূৰ্ব্বে অরণ্য শেষ হয়ে খোলা জায়গা দেখা দিল। রাত্রে শঙ্কর অনেকক্ষণ বসে ম্যাপ দেখলে। সামনে যে মুক্ত প্রাস্তুরবৎ দেশ পড়ল, এখান থেকে সেট প্রায় তিনশো মাইল বিস্তৃত, একেবারে জাম্বেসী