বিভূতি-রচনাবলী راوا দিনের পর দিন কাটছে—মাস গেল, কি সপ্তাহ গেল, কি বছর গেল, হিসেব নেই। শঙ্কর রোগ হয়ে গিয়েছে শুকিয়ে। কোথায় চলেছে তার কিছু ঠিক নেই—শুধু সামনের দিকে যেতে হবে এই জানে। সামনের দিকেই ভারতবর্ষ—বাংলা দেশ । তার পর পড়ল আসল মরু, কালাহারি মরুভূমির এক অংশ। দূর থেকে তার চেহারা দেখে শঙ্কর ভয়ে শিউরে উঠলো। মানুষ কি করে পার হতে পারে এই অগ্নিদগ্ধ প্রান্তর ! শুধুই বালির পাহাড়, তাম্রাভ কটা বালির সমুদ্র। ধূ-ধূ করে যেন জলছে দুপুরের রোদে । মরুর কিনারায় প্রথম দিনেই ছায়ায় ১২৭ ডিগ্রী উত্তাপ উঠল থার্মোমিটাবে। ম্যাপে বার বার লিখে দিয়েছে, উত্তর-পূৰ্ব্ব কোণ ঘেষে ছাড়া কেউ এই মরুভূমি মাঝামাঝি পার হতে যাবে না। গেলেই মৃত্যু, কারণ সেখানে জল একদম নেই। জল যে উত্তরপূর্ব ধারে আছে তাও নয়, তবে ত্রিশ মাইল, সত্তর মাইল ও নব্বই মাইল ব্যবধানে তিনটি স্বাভাবিক উষ্ণুই আছে—যাতে জল পাওয়া যায়, ঐ উগুষ্টগুলি প্রায়ই পাহাড়ের ফাটলে, খুজে বার কর। বড়ই কঠিন। এইজন্যে মিলিটারি ম্যাপে ওদের অবস্থান স্থানের অক্ষ ও দ্রাঘিমা দেওয়া আছে । শঙ্কর ভাবলে, ওসব বার করতে পারবো না । সেক্সটাণ্ট আছে, নক্ষত্রের চার্ট আছে কিন্তু তাদের ব্যবহার সে জানে না। যা হয় হবে, ভগবান ভরসা। তবে যতদূর সম্ভব উত্তর-পূর্ব কোণ ঘেষে যাবার চেষ্টা সে করলে। তৃতীয় দিনে নিতান্ত দৈববলে সে একটা উলুই দেখতে পেল। জল কাদাগোলা, আগুনের মত গরম, কিন্তু তাই তখন অমুতের মত দুলভ। মরুভূমি ক্রমে ঘোরতর হয়ে উঠল। কোন প্রকার জীবের বা উদ্ভিদের চিহ্ন ক্রমশ: লুপ্ত হয়ে গেল। আগে রাত্রে আলো জাললে দু-একটা কীটপতঙ্গ আলোয় আকৃষ্ট হয়ে আসতো, ক্রমে তাও আর আসে না । দিনে উত্তাপ যেমন ভীষণ, রাত্রে তেমনি শীত | শেষ রাত্রে শীতে হাত-পা জমে যায় এমন অবস্থা, অথচ ক্রমশ: আগুন জালাবার উপায় গেল, কারণ জালানি কাঠ একেবারেই নেই। কয়েক দিনের মধ্যে সঞ্চিত জল গেল ফুবিয়ে । সে স্ববিস্তীর্ণ বালুক-সমুদ্রে একটি পরিচিত বালুকণা খুজে বার কর যতদূর অসম্ভব, তার চেয়ে অসম্ভব ক্ষুদ্র এক হাত-দুই ব্যাসবিশিষ্ট জলের উশুই বার করা। সেদিন সন্ধ্যার সময় তৃষ্ণার কষ্টে শঙ্কর উন্মত্তপ্রায় হয়ে উঠল। এতক্ষণে শঙ্কর বুঝেছে যে, এ ভীষণ মরুভূমি এক পার হওয়ার চেষ্টা করা আত্মহত্যার শামিল। সে এমন জায়গায় এসে পড়েছে, যেখান থেকে ফেরলার উপায়ও নেই। একটা উচু বালিয়াড়ির ওপর উঠে সে দেখলে, চারিধারে শুধুই কটা বালির পাহাড়, পূৰ্ব্বদিকে ক্রমশঃ উচু হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমে স্থৰ্য্য ডুবে গেলেও সারা আকাশ সূৰ্য্যাস্তের: আভায় লাল। কিছুদূরে একটা ছোট ঢিবির মত পাহাড় এবং দূর থেকে মনে হল একট। গুহাও আছে। এ ধরনের গ্রানাইটের ছোট ঢিবি এদেশে সব্ব ত্র-ট্রান্সভাল ও রোডেসিয়ায়
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৭৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।