চাদের পাহাড় ৬৭ এদের নাম ‘Kopje' অর্থাৎ ক্ষুদ্র পাহাড়। রাত্রে শীতের হাত থেকে উদ্ধার পাবার জন্যে শঙ্কর সেই গুহায় আশ্রয় নিলে । এইখানে এক ব্যাপার-ঘটল । বারো গুহার মধ্যে ঢুকে শঙ্কর টর্চ জেলে (নতুন ব্যাটারি তার কাছে তখনও ডজন-দুই ছিল ) দেখলে গুহাট ছোট, মেবোটাতে ছোট ছোট পাথর ছড়ানো, বেশ একটা ছোটখাটে। ঘরের মত। গুহার এক কোণে ওর চোখ পড়তেই অবাক হয়ে রইল। একটা ছোট কাঠেব পিপে । এখানে কি করে এল কাঠের পিপে । এগিয়ে দু-পা গিয়েই চমকে উঠল। গুহার দেওয়ালের ধার ঘেসে শায়িত অবস্থায় একটা সাদা নরকঙ্কাল, তার মূণ্ডট দেওয়ালের দিকে ফেরানো। কঙ্কালের আশেপাশে কালে কালো থলে-ছেড়ার মত জিনিস, বোধ হয় সেগুলো পশমের কোটের অংশ। দুখান বুট জুতো কঙ্কালের পায়ে এখনও লাগানো একপাশে একটা মরচেপড়া বন্দুক। পিপেটার পাশে একটা ছিপি-অঁাটা বোতল । বোতলের মধ্যে একথান। কাগজ । ছিপিট খুলে কাগজখান! বার করে দেখলে, তাতে ইংরিজিতে কি লেখা আছে । পিপেটাতে কি আছে দেখবার জন্যে যেমন সে সেটা নাড়াতে গিয়েছে, অমনি পিপের নীচে থেকে একটা ফোস ফোস শব্দ শুনে ওর শরীরের রক্ত ঠাণ্ড হয়ে গেল। নিমেষের মধ্যে একটা প্রকাণ্ড সাপ মাটি থেকে হাত তিনেক উচু হয়ে ঠেলে উঠল। পোধ হয়, ছোবল মারবার আগে সাপট এক সেকেণ্ড দেরি করেছিল। সেই এক সেকেণ্ডের দেরি করার জন্যে শঙ্করের প্রাণ রক্ষা হল। পরমুহূৰ্বেই শঙ্করের ৪৫ অটোমেটিক কোট, গর্জন কবে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে অতবড় ভীষণ বিষধর স্ত্যাগু ভাইপার’-এর মাথাটা ছিন্নভিন্ন হয়ে, রক্তমাংস খানিকট। পিপের গায়ে, খানিকট পাথরের দেওয়ালে ছিটকে লাগল। আলভারেজ ওকে শিখিয়েছিল, পথে সৰ্ব্বদা হাতিয়ার তৈরী রাখবে। এ উপদেশ অনেকবার তার প্রাণ বঁচিয়েছে। অদ্ভুত পরিত্রাণ। সব দিক থেকে। পিপেটা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেল, সেটাতে অল্প একটু জল তখনও আছে। খুব কালো শিউ গোলার মত রং বটে, তবুও জল। ছোট পিপেটা উচু করে ধরে, পিপের চিপি খুলে চকু চক করে শঙ্কর সেই দুৰ্গন্ধ কালে কালির মত জল আকণ্ঠ পান করলে। তারপর সে টর্চের আলোতে সাপট পরীক্ষা করলে । পুরো পাচ হাত লম্বা সাপট, মোটাও বেশ। এ ধরনের সাপ মরুভূমির বালির মধ্যে লুকিয়ে শুধু মুগুট ওপরে তুলে থাকে—অতি মারাত্মক রকমের বিষাক্ত সর্প। এইবার বোতলের মধ্যের কাগজখানা খুলে মন দিয়ে পড়লে। যে ছোট পেন্সিল দিয়ে বি.দ্র. ৯—৫
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৮০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।