চাদের পাহাড় ዓy দিকে তার কোনো নক্সা করে আনে নি বা সেখানে কোনো চিহ্ন রেখে আসেনি, যাতে আবার তাকে খুজে নেওয়া যেতে পারে। সেই স্ববিস্তীর্ণ পৰ্ব্বত ও আরণ্য অঞ্চলের কোন জায়গায় সেই গুহাটা দৈবাৎ সে দেখেছিল, তা কি তার ঠিক আছে, না ভবিষ্ণুতে সে আবার সে জায়গা বার করতে পারবে ? এ যুবকও তো কোনো নক্সা করে নি, কিন্তু এ সাংঘাতিক আহত হয়েছিল রত্নখনি আবিষ্কার করার পরেই, এর ভুল হওয়া খুব স্বাভাবিক। হয়তো এ যা বার করতে পারতো নক্সা না দেখে—সে তা পারবে না। হঠাৎ আলুভারজের মৃত্যুর পূর্বের কথা শঙ্করের মনে পড়ল। সে বলেছিল—চলে যাই, শঙ্কর, গুহার মধ্যে রাজার ভাণ্ডার লুকানো আছে। তুমি দেখতে পাচ্ছ না, আমি দেখতে পাচ্ছি।-- শঙ্কর তার পরে গুহার মধ্যেই নরকঙ্কালট। সমাধিস্থ করলে। পিপেটা ভেঙে ফেলে তারই দুখান কাঠে মরচে-পড়া পেরেক ঠুকে ক্রুশ তৈরী করলে ও সমাধির ওপর সেই ক্রুশট পুতলে। এ ছাড়া খ্রীস্টধৰ্ম্মাচারীকে সমাধিস্থ করবার অন্য কোন রীতি তার জানা নেই। তার পরে সে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলে, এই মৃত যুবকের আত্মার শাস্তির জন্য। এসব শেষ করতে সারাদিনটা কেটে গেল। রাত্রে বিশ্রাম করে পরদিন আবার সে রওন হল। কঙ্কালের চিঠিখান ও হীরাগুলি যত্ন করে সঙ্গে নিল । তবে তার মনে হয়, ও অভিশপ্ত হীরার খনির সন্ধানে যে গিয়েছে, সে আর ফেরেনি। আত্তিলিও গাত্তি ও তার সঙ্গীরা মরেছে, জিম কার্টার মরেছে, আল্ভারেজ মরেছে। এর আগেই বা কত লোক মরেছে, তার ঠিক কি ? এইবার তার পাল । এই মরুভূমিতেই তার শেষ, এই বীর ইটালিয়ান যুবকের মত। তেরে৷ দুপুরের রোদে যখন দিকে দিগন্তে আগুন জলে উঠল, একট। ছোট-পাথরের ঢিপির আড়ালে সে আশ্রয় নিলে। ১৩৫° ডিগ্রি উত্তাপ উঠেছে তাপমান যন্ত্রে, রক্তমাংসের মামুষের পক্ষে এ উত্তাপে পথ হাট চলে না। যদি সে কোন রকমে এই ভয়ানক মরুভূমির হাত এড়াতে পারতো, তবে হয়তো জীবন্ত মানুষের আবাসে পৌছুতেও পারতো। সে ভয় করে শুধু এই মরুভূমি, সে জানে কালাহারি মরু বড় বড় সিংহের বিচরণভূমি, কিন্তু তার হাতে রাইফেল আছে—রাতদুপুরেও এক যত সিংহই হোক, সম্মুখীন হতে সে ভয় করে নী—কিন্তু ভয় হয় তৃষ্ণ-রাক্ষসীকে। তার হাত থেকে পরিত্রাণ নেই। দুপুরে সে দুবার মরীচিকা দেখলে। এতদিন মরুপথে আসতেও এ আশ্চৰ্য্য নৈসৰ্গিক দৃশ্ব দেখে নি, বইয়েই পড়েছিল মরীচিকার কথা। একবার উত্তর-পূর্ব কোণে, একবার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, দুই মরীচিকাই কিন্তু প্রায় এক রকম—অর্থাৎ একটা বড় গম্বুজওয়াল মসজিদ বা গির্জা, চারিপাশে খঙ্গরকুঞ্জ, সামনে বিস্তৃত জলাশয়। উত্তর-পূৰ্ব্ব কোণের মরীচিকাটা বেশী স্পষ্ট।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৮৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।