চাদের পাহাড় ११ আনন্দে ও উত্তেজনায় শঙ্কর ভুলে গেল যে তার প। খোডা, ভুলে গেল যে সে একটান। বেশীদূরে যেতে পারে না। তার আর টোটা নেই—সে আর বন্দুকের আওয়াজ করতে পারলে নী—কিন্তু প্রাণপণুে চীৎকার করতে লাগল, গাছের ডাল ভেঙে নাড়তে লাগল, আগুন জালাবার কাঠকুটাের সন্ধানে চারিদিকে আকুল-দৃষ্টিতে চেয়ে দেখতে লাগল। 專 專 華 ক্রুগার ন্যাশন্যাল পার্ক জরীপ করবার দল, কিম্বালি থেকে কেপ টাউন যাবার পথে, চিমানিমানি পৰ্ব্বতের নীচে কালাহারি মরুভূমির উত্তর-পূর্ব কোণে তাৰু ফেলেছিল। সঙ্গে সাতখানা ডবল টায়ার ক্যাটারপিলার চাক বসানো মোটর গাড়ি। এদের দলে নিগ্রে কুলী ও চাকর-বাকর বাদে’ন’জন ইউরোপীয়। জনচারেক হরিণ শিকার করতে উঠেছিল চিমানিমানি পৰ্ব্বতের প্রথম ও নিম্নতম থাকৃটাতে । হঠাৎ এ জনহীন অরণ্যপ্রদেশে সভ্য রাইফেলের আওয়াজে ওরা বিস্মিত হয়ে উঠল । কিন্তু ওদের পুনরায় আওয়াজের প্রত্যুত্তর না পেয়ে ইতস্ততঃ খুজতে বেরিয়ে দেখতে পেলে, সামনের একটা অপেক্ষাকৃত উচ্চতর চূড়া থেকে, এক জীর্ণ ও কঙ্কালসার কোটরগতচক্ষু প্রেতমূৰ্ত্তি উন্মাদের মত হাত পা নেড়ে তাদের কি বোঝাবার চেষ্টা করছে। তার পরনে ছিন্নভিন্ন অতি মলিন ইউরোপীয় পরিচ্ছদ । ওরা ছুটে গেল। শঙ্কর আবোল-তাবোল কি বকলে, ওরা ভাল বুঝতে পারলে না। যত্ন করে ওকে নামিয়ে পাহাড়ের নীচে ওদের ক্যাম্পে নিয়ে গেল। ওর জিনিসপত্রও নামিয়ে আনা হয়েছিল। তখন ওকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হল । কিন্তু এই ধাক্কায় শঙ্করকে বেশ ভুগতে হল। ক্রমাগত অনাহারে, কষ্টে, উদ্বেগে, অপাদ্য কুখাদ্য ভক্ষণের ফলে, তার শরীর খুব জখম হয়েছিল—সেই রাত্রেই তার বেজায় জর এল। 鼻 橡 韃 জরে সে অঘোর অচৈতন্য হয়ে পড়ল—কখন যে মোটর গাড়ী ওখান থেকে ছাড়লো, কখন যে তারা সলস্বেরিতে পৌছলো শঙ্করের কিছুই খেয়াল নেই। সেই অবস্থায় পনেরো দিন সে সলসবেরির হাসপাতাতে কাটিয়ে দিলে। তারপর ক্রমশঃ সুস্থ হয়ে মাসখানেক পরে একদিন সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাইরের রাজপথে এসে দাড়ালে । চোঁদ সল্স্বেরি! কত দিনের স্বপ্ন।. আজ সে সত্যিই একটা বড় ইউরোপীয় ধরনের শহরের ফুটপাথে দাড়িয়ে । বড় বড় বাড়ী, ব্যাঙ্ক, হোটেল, দোকান, পিচঢালা চওড়া রাস্তা, একপাশ দিয়ে ইলেক্ট্রক ট্রাম চলেছে, জুলু রিকশাওয়াল রিকশা টানছে, কাগজওয়ালা কাগজ বিক্ৰী করছে। সবই যেন নতুন, যেন এসব দৃশ্ব জীবনে কখনো দেখে নি।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৯০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।