পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԵ- বিভূতি-রচনাবলী লোকালয়ে তো এসেছে, কিন্তু সে একেবারে কপদকশূন্য। এক পেয়ালা চা খাবার পয়সাও তার নেই। কাছে একটা ভারতীয় দোকান দেখে তার বড় আনন্দ হল। কতদিন ধে দেখেcনি স্বদেশবাসীব মুখ ! দোকানদার মেমন মুসলমান, সাবার্ম ও গন্ধদ্রব্যের পাইকারী বিক্রেতা। খুব বড দোকান। শঙ্করকে দেখেই সে বুঝলে এ দুঃস্থ ও বিপদগ্ৰস্ত । নিজে দু টাকা সাহায্য করলে ও একজন বড় ভারতীয় সওদাগরের সঙ্গে দেখা করতে বলে দিলে । টাকা দুটি পকেটে নিয়ে শঙ্কর আবার পথে এসে দাড়ালে। আসবার সময় বলে এল— অসীম ধন্যবাদ টক দুটির জন্যে, এ আমি আপনার কাছে ধার নিলাম, আমার হাতে পয়সা এলে আপনাকে কিন্তু এ টাকা নিতে হবে। সামনেই একটা ভারতীয় রেস্ট রেন্ট। সে ভাল কিছু থাবার লোভ সম্বরণ করতে পারলে না। কতদিন সভ্য খাদ্য মুখে দেয় নি! সেখানে ঢুকে এক টাকার পুরী, কচুরী, হালুয়, মাংসের চপ, পেট ভরে খেলে । সেই সঙ্গে ছু-তিন পেয়ালা কফি । চায়ের টেবিলে একখান। পুরানো খবরের কাগজের দিকে তার নজর পড়ল। তাতে একটা জায়গায় বড় বড় অক্ষরে হেড লাইনে লেখা আছে— National Park Survey Party's Singular Experience A lonely Indian found in the desert Dying of thirst and Exhaustion His strange story শঙ্কর দেখলে, তার একট। ফটোও কাগজে ছাপা হয়েছে। তার মুখে একটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্পও দেওয়া হয়েছে। এ রকম গল্প সে কারো কাছে করে নি। খবরের কাগজখানার নাম ‘সলবেরি ডেলি ক্রনিকৃল । সে খবরের কাগজের অফিসে গিয়ে নিজের পরিচয় দিলে। তার চারিপাশে ভিড় জমে গেল। ওকে খুজে বার করবার জন্যে রিপোর্টারের দল অনেক চেষ্টা করেছিল জানা গেল। সেখানে চিমানিমানি পৰ্ব্বতে পা-ভেঙে পড়ে থাকার গল্প বলে ও ফটাে তুলতে দিয়ে শঙ্কর পঞ্চাশ টাকা পেলে । ও থেকে সে আগে সেই সহৃদয় মুসলমান দোকানদারের টাকা দুটি দিয়ে এল। ওদের দৃষ্ট আগ্নেয়গিরিটার সম্বন্ধে সে কাগজে একটা প্রবন্ধ লিখলে। তাতে আগ্নেয়গিরিটারও নামকরণ করলে মাউণ্ট আলভারেজ। তবে মধ্য-আফ্রিকার অরণ্যে লুকানো একটা এত বড় আস্ত জীবন্ত আগ্নেয়গিরির এই গল্প কেউ বিশ্বাস করলে, কেউ করলে না। অবিশ্যি রত্বের গুহার বাষ্পও সে কাউকে জানতে দেয় নি। দলে দলে লোক ছুটবে ওর সন্ধানে । তার পরে একটা বইয়ের দোকানে গিয়ে সে একরাশ ইংরেজি বই ও মাসিক পত্রিকা কিনলে । বই পড়ে নি কতকাল । সন্ধ্যায় একটা সিনেমায় ছবি দেখলে। কতকাল পরে রাত্রে হোটেলের ভাল বিছানায় ইলেক্ট্রক আলোর তলায় শুয়ে বই পড়তে পড়তে সে মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে নীচের প্রিন্স আলবার্ট ভিক্টর স্ট্রটের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিল। ট্রাম যাচ্ছে নীচে দিয়ে, জুলু রিকশাওয়াল রিকৃশ চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, ভারতীয় কফিখানায়