বিভূতি-রচনাবলী من عb চাকরি করে আর দশজন বাঙালী ভদ্রলোকের মতে নির্বিঘ্নে সংসার-ধৰ্ম্ম পালন করতে পারলে সুখী হয়। তাকে যে বিদেশে যেতে হচ্ছে—তাও যে সে বিদেশ নয়, সমুদ্র,পারের দেশে পাড়ি দিতে হচ্ছে—সে নিতান্তই দায়ে পড়ে। নইলে চাকরি থাকে না ! সে চায় নি এবং ভেবেও রেখেছে এইবার নিরাপদে ফিরে আসতে পারলে অন্য চাকরির চেষ্টা করবে। কিন্তু জাহাজ ছাড়বার পরে সুরেশ্বরের মন্দ লাগছিল না। ধীরে ধীরে বোটানিক্যাল গার্ডেন, দুইতীর-ব্যাপী কলকারখানা পেছনে ফেলে রেখে প্রকাগু জাহাজখান সমুদ্রের দিকে এগিয়ে চলেছে । ভোর ছ’টায় জাহাজ ছেড়েছিল, এখন বেশ রৌদ্র উঠেছে, ডেকের একদিকে অনেকখানি জায়গায় যাত্রীরা ডেক-চেয়ার পেতে গল্পগুজব জুড়ে দিয়েছে, ষ্টীমারের একজন কৰ্ম্মচারী সবাইকে বলে গেল পাইলট নেমে যাওয়ার আগে যদি ডাঙায় কোনো চিঠি পাঠানো দরকার হয় তা যেন লিখে রাখা হয়। বয় এসে বল্লে—আপনাকে চায়ের বদলে তার কিছু দেবো ? সুরেশ্বর সেকেণ্ড ক্লাসের যাত্রী, সে চ খায় না, এ খবর আগেই জানিয়েছিল এবং কিছু আগে সকলকে চ দেওয়ার সময়ে চায়ের পেয়াল সে ফেরৎ দিয়েছে। স্বরেশ্বর বল্লে-না, কিছু দরকার নেই। বয় চলে গেল । এমন সময় কে একজন বেশ মাজ্জিত ভদ্র স্বরে ও পেছনের দিক থেকে জিজ্ঞেস করলে— মাপ করবেন, মশায় কি বাঙালী ? সুরেশ্বর পেছনে ফিরে বিস্মিত হয়ে চেয়ে দেখলে এইমাত্র একজন নব আগন্তুক যাত্রী তার ডেকচেয়ার পাতবার মাঝখানে থমকে দাড়িয়েছে ও তাকে প্রশ্ন করছে। তার বয়স পচিশ ছাব্বিশের বেশী নয়, একহারা, দীর্ঘ স্বঠাম চেহারা, স্বন্দর মুখশ্ৰী, চোখ দুটি বুদ্ধির দীপ্তিতে উজ্জল—সবস্থদ্ধ মিলিয়ে বেশ স্বপুরুষ। স্বরেশ্বর উত্তর দেওয়ার আগেই সে লোকটি হাসিমূপে বল্লে—কিছু মনে করবেন না, একসঙ্গেই কদিন থাকতে হবে আপনার সঙ্গে, একটু আলাপ করে নিতে চাই। প্রথমটা বুঝতে পারি নি আপনি বাঙালী কি না। সুরেশ্বর হেসে বল্পে—এ আর মনে করবার কি ? ভালই তো হোল আমার পক্ষেও। সেকেণ্ড ক্লাসে আর কি বাঙালী নেই ? —না, আর র্যারা যাচ্ছেন—সবাই ডেকে। একজন কেবল ফাস্ট ক্লাসের যাত্রী। আপনি কতদূর যাবেন—রেজুনে ? —আপাততঃ তাই বটে—সেখানে থেকে যাবে সিঙ্গাপুর। —বেশ, বেশ, খুব ভাল হোল। আমিও তাই । সরে এসে বক্ষন এদিকে, আপনার সঙ্গে একটু ভাল করে আলাপ জমিয়ে নিই। বাঁচলুম আপনাকে পেয়ে। স্বরেশ্বর শীঘ্রই তার সঙ্গীটির বিষয়ে তার নিজের মুখেই অনেক কথা শুনলে। ওর নাম
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৯৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।