পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Խ8 বিভূতি-রচনাবলী লোক৮া বোধ হয় গোপনে কাজটা করিতেছিল, যেন ধরা পড়িয়া লজ্জিত ও অপ্রতিভ হইয়া গিয়াছে এমন স্বরে বলিল—কিছু না, এই—একটা গাছের বীজ— আমি আশ্চৰ্য্য হইলাম। কি গাছের বীজ ? ওর নিজের জমি নয়, এই ঘোর জঙ্গল, ইহার মাটিতে কি-গাছের বীজ ছড়াইতেছে—তাহার সার্থকতাই বা কি ? কথাটা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম । বলিল—অনেক রকম বীজ আছে হুজুর, পূর্ণিয়ায় দেখেছিলাম একটা সাহেবের বাগানে ভারি চমৎকার বিলিতি লতা—বেশ রাঙা রাঙা ফুল! তারই বীজ, আরও অনেক রকম বনের ফুলের বীজ আছে, দূর দূর থেকে সংগ্রহ করে এনেছি, এখানকার জঙ্গলে ও-সব লতাফুল নেই। তাই পুতে দিচ্ছি, গাছ হয়ে দু-বছরের মধ্যে ঝাড় বেঁধে যাবে, বেশ দেখাবে। লোকটার উদেশ্ব বুঝিরা তাহার উপর আমার শ্রদ্ধা হইল। লোকটা সম্পূর্ণ বিনা-স্বার্থে একটা বিস্তৃত বন্তভূমির সৌন্দৰ্য্য বৃদ্ধি করিবার জন্য নিজের পয়সা ও সময় ব্যয় করিতেছে, যে বনে তাহার নিজের ভূস্বত্ব কিছুই নাই—কি অদ্ভুত লোকটা ! যুগলপ্রসাদকে ডাকিয়া এক গাছের তলার দুজনে বসিলাম। সে বলিল-আমি এর আগেও একাজ করেছি হুজুর, লবটুলিয়াতে যত বনের ফুল দেখেন, ফুলের লতা দেখেন, ও-সব আমি আজ দশ-বারো বছর আগে কতক পূর্ণিয়ার বন থেকে, কতক দক্ষিণ ভাগলপুরের লছমীপুর স্টেটের পাহাড়ী জঙ্গল থেকে এনে লাগিয়েছিলাম। এখন একেবারে ও সব ফুলের জঙ্গল বেঁধে গিয়েছে। —তোমার কি এ কাজ খুব ভাল লাগে ? —লবটুলিয়া বইহারের জঙ্গলট ভারি চমৎকার জায়গা—ওই সব ছোটখাটো পাহাড়ের গারে কি এখানকার বনে-ঝোপে নতুন নতুন ফুল ফোটাব, এ আমার বহুদিনের শখ। —কি ফুল নিয়ে আসতে ? —কি করে আমার এদিকে মন গেল, তা একটু আগে হুজুৰকে বলি। আমার বাড়ী ধরমপুর অঞ্চলে । আমাদের দেশে বুনে ভাণ্ডীর ফুল একেবারেই ছিল না। আমি মহিষ চরিয়ে বেড়াতাম ছেলেবেলায় কুশীনদীর ধারে ধারে, আমার গা থেকে দশ-পনেরো কোশ দুরে। সেখান থেকে বীজ নিয়ে গিয়ে দেশে লাগাই, এখন আমাদের অঞ্চলের পথের ধারে বনঝোপ কি লোকের বাড়ীর পেছনে পোড়ো জমিতে ভাওঁীর ফুলের একেবারে জঙ্গল । সেই থেকে আমার এই দিকে মাথা গেল। যেখানে যে ফুল নেই, সেখানে সেই ফুল, গাছ লতা নিয়ে পুতব, এই আমার শখ। সার-জীবন ওই করে ঘুরেছি। এখন আমি ও-কাজে ঘূর্ণ হয়ে গেছি। যুগলপ্রসাদ দেখিলাম এদেশের বহু ফুল ও স্বধৃগু বৃক্ষলতার খবর রাখে। এ বিষয়ে সে যে একজন বিশেষজ্ঞ, তাহাতে আমার কোন সন্দেহ রহিল না। বলিলাম—তুমি এরিস্টলোকিয়া লতা চেন ? তাহাকে ফুলের গড়ন বলিতেই সে বলিল, হংস-লতা ? হাসের-মত-চেহারা ফুল হয় তো ?