পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক Ye 6: কাছে হাজির করাই—আপনি ওদের মাথাপিছু একটা খাজনা ধাৰ্য্য করে দিন। কতরকমের লোক দেখিবার সুযোগ পাইলাম এই ব্যাপারে! সকাল হইতে দশটা পৰ্য্যন্ত কাছারি করিতাম, বৈকলে আবার তিনটার পর হইতে সন্ধ্যা পৰ্য্যন্ত । তহশীলদার বলিল—এর বেশী দিন এখানে থাকবে না, ফসল মাড়াই ও বেচাকেনা শেষ হয়ে গেলেই সব পালাবে। এর আগে এদের পাওনা আদায় করে নিতে হবে। একদিন দেখিলাম একটি খামারে মারোয়াড়ী মহাজনের মাল মাপিতেছে । আমার মনে হইল ইহার ওজনে নিরীহ প্রজাদের ঠকাইতেছে। আমার পাটোয়ারী ও তহশীলদারদের বলিলাম সমস্ত ব্যবসায়ীর কাটা ও দাড়ি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে। দু-চারজন মহাজনকে ধরিয়া মাঝে মাঝে আমার সামনে আনিতে লাগিল—তাহারা ওজনে ঠকাইয়াছে, কাহারও দাড়ির মধ্যে জুয়াচুরি আছে। সে-সব লোককে মহাল হইতে বাহির করিয়া দিলাম। প্রজাদের এত কষ্ট্রের ফসল আমার মহালে অন্তত কেহ ফাকি দিয়া লইতে পরিবে না । দেখিলাম, শুধু মহাজনে নয়, নানা শ্রেণীর লোকে ইহাদের অর্থের ভার লাঘব করিবার চেষ্টায় ওৎ পাতিয়া রহিয়াছে ! এখানে নগদ পয়সার কারবার খুব বেশী নাই। ফিরিওয়ালাদের কাছে কোন জিনিস কিনিলে ইহারা পয়সার বদলে সরিষা দেয়, জিনিসের দামের অনুপাতে অনেক বেশী সরিষা দিয়া দেয়—বিশেষতঃ মেয়েরা। তাহারা নিতান্ত নিরীহ ও সরল, যা তা বুঝাইয় তাহীদের নিকট হইতে ন্তায্যমূল্যের চতুগুণ ফসল আদায় করা খুবই সহজ। পুরুষেরাও বিশেষ বৈষয়িক নয় । তাহারা বিলাতী সিগা বট কেনে, জুতা-জাম কেনে। (ফসলের টাকা ঘরে আসিলে ইহাদের ও বাড়ীর মেয়েদের মাথা ঘুরিয়া মাষ্ট্র-মেয়ের ফরমাস করে রঙীন কাপড়ের, কাচের ও এনামেলের বাসনের, হালুইকরের দোকান হইতে ঠোঙা ঠোঙা লাড কচেরী আসে, নাচ দেখিয়া গান শুনিয়াই কও পয়সা উড়াইয়া দেয় । ইহার উপর রামজী, হনুমানজীর প্রণামী ও পূজা তো আছেই। তাহার উপরেও আছে জমিদার ও মহাজনের পাইক-পেয়াদার । দুর্দান্ত শীতে রাত জাগিয়া বন্ত-শূকর ও বস্ত-মহিষের উপদ্রব হইতে কত কষ্টে ফসল বাচাইয়া, বাধের মুখে, সাপের মুখে নিজেদের লিতে দ্বিধা না করিয়া সারা বছরের ইহাদের যাহা উপার্জন,—এই পনের দিনের মধ্যে খুশীর সহিত তাহা উড়াইয়া দিতে ইহাদের বাধে না দেখিলাম । কেবল একটা ভালর দিকে দেখা গেল, ইহার কেহ মদ বা তাড়ি খায় না। গাঙ্গেীত বা ভূইহার ব্রাহ্মণদের মধ্যে এসব নেশার রেওয়াজ নাই—সিদ্ধিটা অনেকে খায়, তাও কিনিতে হয় না, বনসিদ্ধির জন্বল হইয়া আছে লবটুলিয়া ও ফুলকিয়ার প্রাস্তরে, পাতা ছিড়ির আনিলেই হইল—কে দেখিতেছে। একদিন মুনেশ্বর সিং আসিয়া জানাইল একজন লোক জমিদারের খাজনা ফাকি দিবার