পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক 〉○> মানুষ হঠাৎ বুড়ো হয় না, যৌবন ধরে রাখা যায় বহুদিন। গায়ের লোক মাঝে মাঝে দর্শন করতে এসে দুধ, ছাতু, ভূরা দিয়ে যায়। চলে যাচ্ছে এই সবে এক রকম করে। —বাঘ ভালুকের সামনে পড়েছ কখনও ? : —কখনও না। তবে ভয়ানক এক জাতের অজগর সাপ দেখেছি এই জঙ্গলে—এক জায়গায় অসাড় হয়ে পড়ে ছিল—তালগাছের মত মোটা, মিশ-কালে, সবুজ রাঙা আঁজি কাটা গারে। চোখ আগুনের ভর্ণটার মত জলছে। এখনও সেটা এই জঙ্গলেই আছে। তখন সেটা জলের ধারে পড়ে ছিল, বোধ হয় হরিণ ধরবার লোভে। এখনও কোনও গুহাগহ্বরে লুকিয়ে আছে। আচ্ছা যাই বাবুসাহেব, রাত হয়ে গেল। সাধু আগুন লইয়া চলিয়া গেল। শুনিলাম মাঝে মাঝে সাধুটি এদের এখানে আগুন লইতে আসিয়া কিছুক্ষণ গল্প করিয়া যায়। অন্ধকার পূৰ্ব্বেই হইয়াছিল, এখন একটু মেটে মেটে জ্যোৎস্না উঠিয়াছে। উপত্যকার বনানী অদ্ভূত নীরবতায় ভরিয়া গিয়াছে। কেবল পাশ্বশ্ব পাহাড়ী ঝরনার কুলু কুলু ম্রোতের ধ্বনি কচিৎ দু-একটা বন্ত মোরগের ডাক ছাড়া কোন শব্দ কানে আসে নাই! তাবুতে ফিরিলাম। পথে বড় একটা শিমুলগাছে ঝাক ঝাক জোনাকি জ্বলিতেছে, ঘুরিয়া ঘুরিয়া চক্রাকারে, উপর হইতে নীচু দিকে, নীচু হইতে উপরের দিকে—নানারূপ জ্যামিতির ক্ষেত্র অঙ্কিত করিয়া আলো-আঁধারের পটভূমিতে । \ు) এইখানে একদিন আসিল কবি বেঙ্কটেশ্বর প্রসাদ । লম্বা, রোগা চেহারা, কালো সার্জের কোট গায়ে, আধময়লা ধুতি পরনে, মাথার চুল রুক্ষ ও এলোমেলো, বয়স চল্লিশ ছাড়াইয়াছে। ভাবিলাম চাকুরীর উমেদার। বলিলাম—কি চাই ? সে বলিল-বাবুজীর (হুজুর বলিয়া সম্বোধন করিল না ) দর্শনপ্রার্থী হয়ে এসেছি। আমার নাম বেঙ্কটেশ্বর প্রসাদ । বাড়ী বিহার শরীফ, পাটনা জিলা । এখানে চকুমকিটোলায় থাকি, তিন মাইল দূর এখান থেকে! —ও, তা এখানে কি জন্তে ? —বাবুজী যদি দয়া করে অনুমতি করেন, তবে বলি। আপনার সময় নষ্ট করছি নে ? তথন আমি ভাবিতেছি লোকটী চাকুরীর জন্তই আসিয়াছে। কিন্তু ‘হুজুর’ না-বলাতে সে আমার শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিয়াছিল । বলিলাম—বমুন, অনেক দূর থেকে হেঁটে এসেছেন এই গরমে। আর একটি বিষয় লক্ষ্য করিলাম—লোকটির হিন্দী খুব মার্জিত। সে-রকম হিন্দীতে আমি কথা বলিতে-পারি না। সিপাহী পিয়াদা ও গ্রাম্য প্রজা লইয়া আমার কারবার,