পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9A9 বিভূতি-রচনাবলী তবে মঞ্চী সকল কাজে অগ্রণী । সে আমার জন্ত গমের খড় পাতিয়া পুরু করিয়া বসিবার আসন করিল। একটি ছোট বাটিতে মহুয়ার তৈল আনিয়া আমাকে স্নান করিয়া আসিতে বলিল । বলিল—চলুন আমি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি—ঐ টোলার দক্ষিণে একটা ছোট কুণ্ডী আছে । বেশ জল । বলিলাম—সে জলে আমি নাইব না মঞ্চী । টোলমুদ্ধ লোক সেই জলে কাপড় কাচে, মুখ ধোয়, স্নান করে, বাসনও মাজে। সে জল বড় খারাপ হবে, তোমরা কি এখানে সেই জলই খাচ্ছ ? তা হলে আমি উঠি । ও জল আমি খাব না। মঞ্চী ভাবনায় পড়িয়া গেল। বোঝা গেল ইহারাও সেই জল ছাড়া অন্ত জল পাইবে কোথায় যে খাইবে না। না থাইয়া উপায় কি ? মকীর বিষণ্ণ মুখ দেখিয়া আমার কষ্ট হইল। এই দূষিত জল ইহারা মনের আনন্দে পান করিয়া আসিতেছে, কখনও ভারে নাই এ-জলে আবার কি থাকিতে পারে, আজ আমি যদি জলের অজুহাতে ইহাদের আতিথ্য গ্রহণ না করিয়া চলিয়া যাই, সরলপ্রাণ মেয়েটি মনে বড় আঘাত পাইবে । মঞ্চীকে বলিলাম—বেশ, ঐ জল খুব করে ফুটিয়ে নাও—তবে খাব। স্বান করা থাক্ গে। মঞ্চী বলিল—কেন বাবুজী, আমি আপনাকে এক টিন জল ফুটিয়ে দিচ্ছি তাতেই আপনি স্নান করুন। এখনও তেমন বেলা হয় নি। আমি জল নিয়ে আসছি, বসুন। মঞ্চী জল আনিয়া রান্নার যোগাড় করিয়া দিল । বলিল—আমার হাতে তো খাবেন না বাবুজী, আপনি নিজেই রাধুন তবে ? —কেন খাব না, তুমি যা পার তাই রাধ। —ত হবে না বাবুজী, আপনিই রাখুন। একদিনের জন্যে আপনার জাত কেন মারব ? আমার পাপ হবে । —কিছু হবে না। আমি তোমাকে বলছি, এতে কোন দোষ হবে না । অগত্য মঞ্চী রণধিতে বসিল । রণধিবার আয়োজন বিশেষ কিছু নয়—খানকতক মোট মোটা হাতে-গড়া রুটি ও বুনে ধুধুলের তরকারি। নকৃছেদী কোথা হইতে এক ভীড় মহিষের দুধ যোগাড় করিয়া আনিল । রাধিতে বসিয়া মঞ্চী এতদিন কোথায় কোথায় ঘুরিয়াছে, সে গল্প করিতে লাগিল। পাহাড়ের অঞ্চলে কলাই কাটিতে গিয়া একটা রামছাগলের বাচ্চ পুষিয়াছিল, সেটা কি করিয়া হারাইয়া গেল সে-গল্পও আমাকে ঠায় বসিয়া শুনিতে হইল। আমার বলিল—বাবুজী, র্কাকোয়াড় রাজের জমিদারীতে যে গরম জলের কুও আছে জানেন ? আপনি তো কাছাকাছি গিয়েছিলেন, সেখানে যান নি ? আমি বলিলাম, কুণ্ডের কথা শুনিয়াছি, কিন্তু সেখানে যাওয়া আমার ঘটেনাই। "