পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ8ba বিভূতি-রচনাবলী দিত। যেদিন আমরা খাসমহল থেকে চলে এলাম, সেই রাত্রেই মঞ্চী নিরুদ্দেশ হল । আমি সেদিন সকালে ঐ ছোকরাটাকে খুপড়ির কাছে ঘুরতে দেখেছি। ঠিক তার কাজ, হুজুর! ইদানীং মঞ্চী বড় কলকাতা দেখব, কলকাতা দেখব, করত। তখনই জানি একটা কিছু ঘটবে। আমারও মনে পড়িল মঞ্চী আর-বছর কলিকাতা দেখিবার যথেষ্ট আগ্রহ দেখাইয়াছিল বটে। আশ্চৰ্য্য নয়, ধূৰ্ত্ত রাজপুত যুবক সরলা বন্তমেয়েটিকে কলিকাতা দেখাইবার লোভ দেখাইয়া ভুলাইয়া লইয়া যাইবে। * আমি জানি এ অবস্থায় এদেশের মেয়েদের শেষ পরিণতি হয় আসামের চা-বাগানে কুলীগিরিতে। মন্ধীর অদৃষ্টে কি শেষকালে নিৰ্ব্বান্ধব আসামের পাৰ্ব্বত্য অঞ্চলে দাসত্ব ও নিৰ্ব্বাসন লেখা আছে ? বৃদ্ধ নকছেদীর উপর খুব রাগ হইল। এই লোকটা যত নষ্টের মূল। বৃদ্ধ বয়সে মঞ্চাকে বিবাহ করিতে গিয়াছিল কেন ? দ্বিতীয়, গবর্ণমেণ্টের টিকাদারকে ঘুষ দিয়া বিদায় করিয়াছিল কেন ? যদি উহাকে জমি দিই, সে ওর জন্ত নয়, উহার প্রৌঢ় স্ত্রী তুলসী ও ছেলেমেয়েগুলির মুখের দিকে চাহিয়াই দিব । দিলামও তাই । নাঢ়া বইহারে শীঘ্র প্রজ বসাইতে হইবে, সদর আপিসের হুকুম আসিয়াছে, প্রথম প্রজা বসাইলাম নকৃছেদীকে । নাঢ় বইহারে ঘোর জঙ্গল । মাত্র দু-চার ঘর প্রজা সামান্ত জঙ্গল কাটিয়া খুপডি বাধিতে শুরু করিয়াছে। নকৃছেদী প্রথমেই জঙ্গল দেখিয়া পিছাইয়া গিয়াছিল, বলিল-হুজুর দিনমানেই বাঘে খেয়ে ফেলে দেবে ওখানে—কাচাবাচ্চা নিয়ে ঘর করি— তাহাকে স্পষ্ট বলিয়া দিলাম, তার পছন্দ না হয়, সে অন্যত্র দেখুক । নিরুপায় হইয়া হইয়া নকৃছেদী নাড়া বইহারের জঙ্গলেই জমি লইল । NA সে এখানে আসা পৰ্য্যস্ত আমি কখনও তাহার খুপডিতে যাই নাই। তবে সেদিন সন্ধ্যার সময় নাঢ় বইহারের জঙ্গলের মধ্যে দিয়া আসিতে দেখি ঘন জঙ্গলের মধ্যে খানিকটা ফাকা জায়গা—নিকটে কাশের দুটি ছোট খুপডি। একটার ভিতর হইতে আলো বাহির হইতেছে । সেইটাই যে নকৃছেদীর তা আমি জানিতাম না, ঘোড়ার পায়ের শব্দ শুনিয়া যে প্রৌঢ় স্ত্রীলোকটি খুপড়ির বাহিরে আসিয়া দাডাইল—দেখিলাম সে তুলসী। —তোমরা এখানে জমি নিয়েছ ? নকৃছেদী কোথায় ? • তুলসী আমার দেখিয়া খতমত খাইরা গিয়াছে। ব্যস্তসমস্ত হইয়া সে গমের ভূষি-ভর