পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ©8 বিভূতি-রচনাবলী নারী সব জায়গায় সব অবস্থাতেই সমান। বস্ত বালিক ভানুমতীও সেই একই ধাতুতে গড়া ! বলিলাম—কেন ভুলে যাব ? মাঝে মাঝে আসব নিশ্চয়ই— ভানুমতী কেমন একরকম অভিমানের মুরে ঠোঁট ফুলাইয়া বলিল—ই, বাংলা দেশে গেলে, কলকাতা শহরে গেলে আপনার আবার মনে থাকবে এ পাহাড়ে জংলী দেশের কথা—একটু থামিয়া বলিল-আমাদের কথা—আমার কথা— স্নেহের স্বরে বলিলাম-কেন, মনে ছিল না ভানুমতী ? আয়নাথান পাও নি ? মনে ছিল কি ছিল না ভাব ভানুমতী উজ্জ্বল মুখে বলিল—উঃ বাবুজী, বড় চমৎকার আয়না—সত্যি, সে-কথা আপনাকে জানাতে ভূলেই গিয়েছি! সমাধি-স্থানের সেই বটগাছের তলায় যখন গিয়া দাড়াইলাম, তখন বেলা নাই বলিলেও হয়, দূর পাহাড়শ্রেণীর আড়ালে স্বৰ্য্য লাল হইয়া ঢলিয়া পড়িতেছে, কখন ক্ষীণাঙ্গ চাদ উঠিয়া বটতলায় অপরাহ্লের এই ঘন ছায়া ও সম্মুখবর্তী প্রদোষের গভীর অন্ধকার দূর করিবে, স্থানটি যেন তাহারই স্তব্ধ প্রতীক্ষায় নীরবে দাড়াইয়া আছে। ভানুমতীকে কিছু বনের ফুল কুড়াইয়া আনিতে বলিলাম, উহার ঠাকুরদাদার কবরের পাথরে ছড়াইবার জন্ত। সমাধির উপর ফুল-ছড়ানো-প্রথা এদের দেশে জানা নাই, আমার উৎসাহে সে নিকটের একটা বুনো শিউলি গাছের তলা হইতে কিছু ফুল সংগ্ৰহ করিয়া আনিল । তাহার পর ভানুমতী ও আমি দুজনেই ফুল ছড়াইয়া দিলাম রাজা দেবিরু পান্নার সমাধির উপরে। ঠিক সেই সময় ডানা ঝটপট করিয়া একদল সিল্লি ডাকিতে ডাকিতে উড়িয়া গেল বটগাছটার মগডাল হইতে–যেন ভানুমতী ও রাজা দেবিরুর সমস্ত অবহেলিত অত্যাচারিত, প্রাচীন পূৰ্ব্বপুরুষগণ আমার কাজে তৃপ্তিলাভ করিয়া সমস্বরে বলিয়া উঠিলেন—সাধু! সাধু! কারণ ভাৰ্য্য-জাতির বংশধরের এই বোধ হর প্রথম সন্মান অনাৰ্য্য রাজ-সমাধির উদেশে !) পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ > ধাওতাল সাছ মহাজনের কাছে আমাকে একবার হাত পাতিতে হইল। আদায় সেবার হইল কম, অথচ দশ হাজার টাকা রেভিনিউ দাখিল করিতেই হইবে। তহসিলদার বনোয়ারীলাল পরামর্শ দিল, বাকী টাকাটা ধাওতাল সীহুর কাছে কর্জ করুন। আপনাকে সে নিশ্চয়ই দিতে আপত্তি করিবে না । ধাওতাল সাহু আমার মহালের প্রজা নয়, সে থাকে গবর্ণমেণ্টের