পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᎼᏔ% o বিভূতি-রচনাবলী এই বিস্তৃত মেঘচ্ছায়াস্যামল মুক্ত তৃণভূমির মধ্যে ঘোড়া ছটাইয়া মাইলের পর মাইল যাইতাম—কখনও সরস্বতীকুণ্ডীর বনের মধ্যে চুকিয়া দেখিয়াছি—প্রকৃতির এই অপূৰ্ব্ব নিভৃত সৌন্দৰ্য্যভূমি যুগলপ্রসাদের স্বহস্তে রোপিত নানাজাতীয় বন্য ফুলে ও লতায় সজ্জিত হইয়া আরও সুন্দর হইয়া উঠিয়াছে। সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে সরস্বতী হ্রদ ও তাহার তীরবর্তী বনানীর মত সৌন্দৰ্য্যভূমি খুব বেশী নাই—এ নিঃসন্দেহে বলিতে পারি। হ্রদের ধারে রেড ক্যাম্পিয়নের মেলা বসিয়াছে এই বর্ষাকালে—ত্ত্বদের জলের ধারের নিকট । জলজ ওয়াটারক্রোফটের বড় বড় নীলাভ সাদা ফুলে ভরিয়া আছে। যুগলপ্রসাদ সেদিনও কি একটা বন্তলতা আনিয়া লাগাইয়া গিয়াছে জানি। সে আজমাবাদ কাছারিতে মুহুরীর কাজ করে বটে, কিন্তু তাহার মন পড়িয়া থাকে সরস্বতী কুণ্ডীর তীরবর্তী লতাবিতানে ও বনপুষ্পের কুঞ্জে । সরস্বতী কুণ্ডীর বন হইতে বাহির হইতাম—আবার মুক্ত প্রান্তর, আবার দীর্ঘ তৃণভূমি— বনের মাথায় ঘন নীল বর্ষার মেঘ আসিয়া জমিতেছে, সমগ্র জলভার নামাইয়া রিক্ত হইবার পূৰ্ব্বেই আবার উঠিয়া আসিতেছে নবমেঘপুঞ্জ—একদিকের আকাশে এক অদ্ভুত ধরনের নীল রং ফুটিয়াছে—তাহার মধ্যে একখণ্ড লঘুমেঘ অস্তদিগন্তের রঙে রঞ্জিত হইয়া বহির্বিশ্বের দিগন্তে কোন অজানা পৰ্ব্বতশিখরের মত দেখা যাইতেছে। সন্ধ্যার বিলম্ব নাই। দিগন্তহারা ফুলকিয়া বইহারের মধ্যে শিয়াল ডাকিয়া উঠিত—একে মেঘের অন্ধকার, তার উপর সন্ধ্যার অন্ধকার নামিতেছে—ঘোডার মুখ কাছারির দিকে ফিরাইতাম । কতবার এই ক্ষান্তবর্ষণ মেঘ-থমৃকানো সন্ধ্যায় এই মুক্ত প্রাস্তরের সীমাহীনতার মধ্যে কোন দেবতার স্বপ্ন যেন দেখিয়াছি—এই মেঘ, এই সন্ধ্যা, এই বন, কোলাহলরত শিয়ালের দল, সরস্বতী হ্রদের জলজ পুপ, মঞ্চী, রাজু পাড়ে, ভানুমতী, মহলিখারূপের পাহাড়, সেই দরিদ্র গোড়-পরিবার, আকাশ, বোম সবই তার মুমহতী কল্পনায় একদিন ছিল বীজরীপে নিহিত—ৰ্তারই আশীৰ্ব্বাদ আজিকার এই নবনীলনীরদমালার মতই সমুদয় বিশ্বকে অস্তিত্বের অমৃতধারায় সিক্ত করিতেছে—এই বর্ষা-সন্ধ্যা তারই প্রকাশ, এই মুক্ত জীবনানন্দ তারই বাণী, অন্তরের অন্তরে যে বাণী মানুষকে চেতন করিয়া তোলে। সে দেবতাকে ভয় করিবার কিছুই নাই—এই সুবিশাল ফুলকিয়া বইহারের চেয়েও, ঐ বিশাল মেঘভর আকাশের চেয়েও সীমাহীন, অনন্ত তার প্রেম ও আশীৰ্ব্বাদ । যে যত হীন, যে যত ছোট, সেই বিরাট দেবতার অদৃশ্য প্রসাদ ও অনুকম্প তার উপর তত বেশী । আমার মনে যে দেবতার স্বপ্ন জাগিত, তিনি যে শুধু প্রবীণ বিচারক, ন্যায় ও দণ্ডমুণ্ডের কৰ্ত্তা, বিজ্ঞ ও বহুদৰ্শী কিংবা অব্যয়, অক্ষয় প্রভৃতি দুরূহ দার্শনিকতার আবরণে আবৃত ব্যাপার তাহা নয়—নাঢ় বইহারের কি আজমাবাদের মুক্ত-প্রান্তরে কত গোধূলিবেলায় রক্তমেঘস্তুপের, কত দিগন্তহার জনহীন জ্যোৎস্নালোকিত প্রাস্তরের দিকে চাহিয়া মনে হইত তিনিই প্রেম ও রোমান্স, কবিতা ও সৌন্দৰ্য্য, শিল্প ও ভাবুকতা—তিনি প্রাণ দিয়া ভালবাসেন,