পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२ একদিন দেখি এমনি একটি নূতন গৃহস্থের বাড়ীর দাওয়ায় বসিয়া গনোরী তেওয়ারী স্কুলমাস্টার শাল পাতার ওপর ছাতুর তাল মাখিয়া খাইতেছে। —হজুর যে ! ভাল আছেন ? —বেশ আছি। তুমি কবে এলে? কোথায় ছিলে ? এর তোমার কেউ হয় নাকি ? —কেউ নয়। এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম, বেলা হয়ে গিয়েছে, ব্রাহ্মণ, এদের এখানে অতিথি হ’লাম। তাই দুটো খাচ্ছি। চেনা-শুনো ছিল না, তবে আজ হল । গৃহকৰ্ত্ত আগাইয়া আসিয়া আমাকে নমস্কার করিয়া বলিল-আমুন, হুজুর, বসুন উঠে। —না, বসব না । বেশ আছি। কতদিন জমি নিয়েছ ? —আজি দু-মাস হুজুর। এখনও জমি চ্যতে পারি নি। গনোরী তেওয়ারীকে একটি ছোট মেয়ে আসিয়া কয়েকটি র্কাচা লঙ্ক দিয়া গেল। সে খাইতেছে কলাইয়ের ছাতু, মুন ও লঙ্কা। ছাতুর সে বিরাট তাল শীর্ণ গনোরী তেওয়ারীর পেটে কোথায় ধরিবে বোঝা কঠিন। গনোরী থাটি ভবঘুরে। যেখানে খাইতে বসিয়াছে, সেই দাওয়ার এক পাশে একটি ময়লা কাপড়ের পুটুলি, একটি গেলাপ অর্থাৎ পাতলা বালাপোশজাতীয় লেপ দেখিয়া বুঝিতে পারিলাম উহা গনোরীর—এবং উহাই উহার সমগ্র জাগতিক সম্পত্তি। গনোরীকে বললাম—ব্যস্ত আছি, তুমি কাছারিতে এসে ওবেলা । বিকালে গনোরী কাছারিতে আসিল । বলিলাম—কোথায় ছিলে গনোরী ? —বাবুজী, মুঙ্গের জেলার পাড়াগ অঞ্চলে। বহুৎ পাড়াগায়ে ঘুরেছি। —কি করে বেড়াতে ? —পাঠশালা করতাম। ছেলে পড়াতাম। —কোনো পাঠশালা টিক্ল না ? —দু-তিন মাসের বেশী নয় হুজুর। ছেলেরা মাইনে দেয় না। —বিয়ে-থাওয়া করেছ? বয়স কত হল ? —নিজেরই পেট চলে না হুজুর ? বিয়ে করব কি। বয়স চৌত্রিশ-পয়ত্রিশ হয়েছে। গনোরীর মত এত দরিদ্র লোক এ অঞ্চলেও বেশী দেখা যায় না । মনে পড়িল, গনোরী একবার বিনা-নিমন্ত্রণে ভাত খাইতে আমার কাছারিতে আসিয়াছিল, প্রথম যেবার এথানে আসি। বর্তমানে বোধ হয় কত কাল সে ভাত খাইতে পায় নাই। গাঙ্গেীত-বাড়ীতে অতিথি হইরা কলাইয়ের ছাতু খাইয়া দিন কাটাইতেছে। বলিলাম-গনোরী, আজ রাত্রে আমার এখানে খাবে। কণ্ট মিশির রাধে, তার হাতে তোমার তো খেতে আপত্তি নেই ?. গনোরী বেজায় খুশী হইল। একগাল হাসিয়া বলিল—কন্ট, আমাদেরই ব্রাহ্মণ, ওর