পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক )lyపి প্রসাদ বোধ হয় ভাবিতেছিল নূতন কোন ধরনের গাছপালা এ জঙ্গল হইতে লইয়া গিয়া অন্তর রোপণ করিতে পারে। দেখিলাম তাহার সমস্ত মনোযোগ নূতন লতাপাতার স্কুল, মুদৃপ্ত পাতার গাছ প্রভৃতির দিকে নিবন্ধ—অন্ত দিকে তাহার দৃষ্টি নাই। যুগলপ্রসাদ পাগলই বটে, কিন্তু ঐ এক ধরণের পাগল। নূরজাহান নাকি পারস্য হইতে চেনার গাছ আনিয়া কাশ্মীরে রোপণ করিয়াছিলেন। এখন নূরজাহান নাই, কিন্তু সারা কাশ্মীর মুদৃপ্ত চেনার বৃক্ষে ছাইয়া ফেলিয়াছে। যুগলপ্রসাদ মরিয়া যাইবে, কিন্তু সরস্বতী হ্রদের জলে আজ হইতে শতবর্ষ পরেও হেমন্তে ফুটন্ত স্পাইডারলিলি বাতাসে মুগন্ধ ছড়াইবে, কিংবা কোন-না-কোন বনঝোপে বন্ত হংসলতার হাসাকৃতি নীলফুল দুলিবে, যুগলপ্রসাদই যে সেগুলি নাঢ় বইহারের জঙ্গলে আমদানি করিয়াছিল একদিন —একথা না-ই বা কেহ বলিল ! ভানুমতী বলিল—বয়ে ওই সেই ট7ড়বারোর গাছ—চিনেছেন ? বন্ত-মহিষের রক্ষাকৰ্ত্ত সদয় দেবতা টাড়বারোর গাছ অন্ধকারে চিনিতে পারি নাই । আকাশে চাদ নাই, কৃষ্ণপক্ষের রাত্রি । অনেকটা নামিয়া আসিয়াছি। এবার সেই ছাতিম বন । কি মিষ্টি মনমাতানো গন্ধ ! ভানুমতীকে বলিলাম—একটু বসি । - পরে সেই বনপথে অন্ধকারের মধ্যে নামিতে নামিতে ভাবিলাম, লবটুলিয়া গিয়াছে, নাঢ়া ও ফুলকিয়া বইহার গিয়াছে—কিন্তু মহালিখারূপের পাহাড় রহিল—ভানুমতীদের ধনারি পাহাড়ের বনভূমি রহিল। এমন সময় আসিবে হয়তো দেশে, যখন মানুষে অরণ্য দেখিতে পাইবে না—শুধুই চাষের ক্ষেত আর পাটের কল, কাপড়ের কলের চিমনি চোখে পড়িবে, তখন তাহারা আসিবে এই নি ত অরণ্যপ্রদেশে, যেমন লোকে তীর্থে আসে। সেই সব অনাগত দিনের মানুষদের জন্ত এ বন অক্ষুণ্ণ থাকুক । २ রাত্রে বসিয়া জগন্ধ পান্না ও তাহার দাদার মুখে তাহাদের সম্বন্ধে অনেক কথাবার্তা শুনিলাম। মহাজনের দেন এখনও শোধ যার নাই, দুইটি মহিষ ধার করিয়া কিনিতে হইয়াছে, না কিনিলে চলে না, গয়ার এক মাড়োয়াড়ী মহাজন আগে আসিয়া ঘি কিনিয়া লইয়া যাইত— আজি তিন চার মাস সে আর আসে না। প্রায় আধ মণ ঘি ঘরে মজুত, খরিদার নাই। ভানুমতী আসিয়া দাওয়ার একধারে বসিল। যুগলপ্রসাদ অত্যন্ত চা-খোর, সে চা-চিনি সঙ্গে আনিয়াছে আমি জানি। কিন্তু লাজুকতাবশতঃ গরম জলের কথা বলিতে পারিতেছে না, তাহাও জানি। বলিলাম-চাষ্ট্রের জল একটু গরম করার স্ববিধে হবে কি ভানুমতী ? রাজকুমারী ভানুমতী চা কখ করে নাই। চা খাইবার রেওয়াজই নাই এখানে।