পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১২ বিভূতি-রচনাবলী শিমুলগাছে রাঙাফুল ফুটে আছে। অনঙ্গ ছেলেদের বললে—এখানে এই ছায়ায় বসে দুটাে মুড়ি খেয়ে নে—কখন ভাতছালা পেীছবি তার ঠিক নেই। বড়ছেলেটা বললে—ও কি আমের বোল হয়েচে দ্যাখো সব গাছে । এবার বড় আম হবে, না মা ? —খেয়ে নে মুড়ি। আমের বোল দেখবার সময় নেই এখন। ছেলে দুটি ছুটোছুটি করে বেড়াতে লাগলে নদীর পাড়ে গাছপালার ছায়ায় ফড়িং ধরবার জন্তে । অনঙ্গ ওদের বকেঝকে আবার গাড়ীতে ওঠালে। নিস্তব্ধ ফাগুন-দুপুরে মেঠোপথে আমবন, জাম, বট, বাশ, শিমুলগাছের ছায়ায় ছায়ার গরুর গাড়ীর ছইয়ের মধ্যে বসে অনঙ্গ-বেয়ের ঝিমুনি ধরলো। বডছেলে বললে—ম, তুমি ঢুলে পড়ে যাচ্চ যে, উঠে বোসে । অনঙ্গ অপ্রতিভ হয়ে বললে—চোখে একটু জল দিলে হোত। ঘুম আসচে। ভাতছালা পৌছুতে বেলা পড়ে গেল। গাড়োয়ান বললে—তবু সকালে সকালে এসে গ্যালাম মা-ঠাকরেণ। ন’ কোশ রাস্তা আমাদের গা থে। গরুদুটোর মুধার বয়েস তাই আসতে পারলে । ভাতছালাতে অনঙ্গ-বেয়ের ঘর ছিল গ্রামের বাগদি পাডা থেকে অল্পদুরে খুব বড় একটা বিলের কাছে । একখানা খড়ের ঘর, সঙ্গে ছোট একখানা রান্নাঘর, অনেকদিন কেউ না থাকাতে চালার খড় কিছু কিছু উড়ে পড়েচে, মাটির দাওয়াতে ছাগল গরু উঠে খুঁড়ে ফেলেচে। উঠোনের চারিধারে বঁাশের বেড়া দেওয়া ছিল, ফঁাকে ফঁাকে রাংচিতার গাছ । বেড়ার শুকনো বঁশি লোকে ভেঙে নিয়েচে অনেক । মতি বাগদিনী ছুটে এল ওদের গরুর গাড়ী দেখে। মহাখুশীর সঙ্গে বললে—বামুন-দিদি আলেন নাকি ? ওমা, আমাদের কি ভাগ্যি— অনঙ্গ-বে বললে-আয় আয় ও মতি, ভাল আছিল ? —দাড়ান, আগে একটু গড় করে নিই। পায়ের ধুলো স্থান এটু-খোকার বেশ বড় হয়েচে দেখচি ৷ বাঃ– —ভাল ছিলি ? —আপনাদের ছিচরণের আশীব্বাদে । এখন আছেন কোথায় ? —ওই নতুনগ, কাপালীপাড়ায়। ন’কোশ রাস্ত। এখান থেকে। —এখানে এখন থাকবেন তো ? —বেশিদিন কি থাকতে পারি? সেখানে উনি ইস্কুল খুলেচেন মস্তবড়। এক-ঘর ছাত্তর। দুদিন থাকবো তাই তাকে রোধে খেতে হবে। —খাওয়াদাওয়ার যোগাড় করবো ? —আমাদের সঙ্গে চালডাল আছে পুটুলিতে। তুই দুটো শুকনে কাঠ কুড়িয়ে দিয়ে যা।