পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত శిe পদ্মবিলের থেকে কিছু দূরে মুচিপাড়া। প্রায় একশে ঘর মুচির বাস। পদ্মবিলে মাছ ধরে আশপাশের গ্রামে বেচে এর জীবিকা-নিৰ্বাহ করে। পোয়াটাক পথ দূরে গ্রামের অন্ত অন্ত জাত বাস করে। ব্রাহ্মণের বাস এ গ্রামেও নেই-এর একটা প্রধান কারণ, গঙ্গাচরণ এমন গ্রামে বাস করে নি যেখানে ব্রাহ্মণের বাস আছে। কারণ সে গ্রামে তার পসার থাকবে না। তার বদলে অন্ত ব্রাহ্মণ যেখানে ডাকবার সুবিধে আছে, এমন গ্রামে সে ঘর বাধতে যাবে কি জন্তে ? তাতে আদর হয় না । অনঙ্গ-বেয়ের আগমনের সংবাদে গোয়ালাপাড়া থেকে বেী-বিয়েরা দেখা করতে এল। কেউ নিয়ে এল একটি ঘটিতে সেরখানেক দুধ, কেউ নিয়ে এল থানিকট খেজুর-গুড়ের পাটালি, কেউ একছড়া পাক মৰ্ত্তমান কলা । অনেক রাত পৰ্য্যন্ত ঝি-বেীয়েরা দাওয়ায় বসে গল্প করলে। সকলেই মহাখুশি অনঙ্গ-বেী আসাতে। সকলেই অনুরোধ জানালে এখানে কিছুদিন থাকতে। এখানে আবার উঠে এলে কেমন হয় ? তারা সব সুবিধে করে দেবে বসবাসের। কোনো অভাব-অভিযোগ থাকতে দেবে না। আসুন না বামুনদিদি তাদের গায়ে আবার ? ওরা নিজেরাই ঘরদের বীট দিয়ে পরিষ্কার করে দিলে। মাটির প্রদীপে তেল সলতে দিয়ে আলো জেলে দিলে। মতি মুচিনী বললে—রাত্তিরে আমি এসে শোবে ঘরের দাওয়ায়। দুটাে খেয়ে আসি— অনঙ্গ-বেী তাকে বাড়ী গিয়ে খেতে দিলে না। যা রান্না হয়, এখানেই দুটো ডাল ভাত খেয়ে নিলেই হবে । গরুর গাড়ীর গাড়োয়ানও তো খাবে। সন্ধ্যার পরে বেশ জ্যোৎস্না উঠলো। একটু ঠাণ্ডা পড়েচে জোর দক্ষিণ বাতাসে। বৌবিয়েরা একে একে চলে গে । মতি মুচিনী কলার পাত কেটে এনে বিলের ধারে ঘাসের উপর ভাত খেতে বসলো। গাড়োয়ান বললে তার শরীর খারাপ হয়েচে সে কিছু থাবে না রাত্রে। অনঙ্গ মাদুর পেতে গল্প করতে সলো বিলের দিকের জ্যোৎস্নালোকিত দাওয়ায় । শুীমাচরণ ঘোষের বিধবা মেয়ে একটা কেরোসিনের টেমি ধরিয়ে এসে হাজির হোল অনেক রাত্রে। সেও রাত্রে এখানে শোবে। অনঙ্গ-বেীকে সেও বড় ভালবাসে। এ মেয়েটির বিবাহ হয়েছিল পাশের গ্রাম কুমুরে। এগারে বছর বয়সে বিধবা হয়েচে, এখন প্রায় সাতাশ-আটাশ বছর বয়েস, দেখতে এখন - সুন্দরী, টকটকে ফস। রং, মুখশ্ৰীও ভাল। অনঙ্গ হেসে বললে—আয় কালী, চাদনী রাতে আবার একটা টেমি কেন ? কালী আঁচল দিয়ে টেমিটা বঁচিয়ে আনচে পদ্মবিলের জোর দক্ষিণ হাওয়া থেকে। বললে—সে জন্তে নয় দিদি, ওই মুচিপাড়ার বাশবাগান দিয়ে আসতে গা ছম ছম করে এত রাত্তিরে । —কেন রে ভূতে তোর ঘাড় মটকাৰে ? কালী হেসে বললে—ওসব নাম কোরো না রাত্তির বেলা । তুমি ডাকাত মেয়েমাহৰ বাবা