পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ88 বিভূতি-রচনাবলী —ছিঃ ছিঃ, দু’কাঠা চাল বানি দেবে তার জন্তে তুমি দশ আড়ি ধান ভানতে যাবে ? অত কষ্ট করে দরকার নেই। —কষ্ট আর কি ? দু’কাঠা চালের দাম কত আজকাল ! আমি তা ছাড়বে না । দু'কাঠা চাল বুঝি ফেলনা ! —লোকে কি বলবে বল তো ? —বলুক গে। আমার সংসারে যদি দু’কাঠা চালের সাশ্রয় হয় তবে লোকের কথাতে কি আসে যাচ্চে ? —তুমি যা ভাল বোঝে কর, কিন্তু আমার মনে হচ্চে তোমার শরীর টিকবে না। --লে তোমায় দেখতে হবে না । তারপর অনঙ্গ-বেী হঠাৎ খিল খিল করে হেসে উঠে ঘাড দুলিয়ে দুলিয়ে বললে—তোমায় ঠকিয়েচি গো তোমায় ঠকিয়েচি । গঙ্গাচরণ বিস্ময়ের স্বরে বললে—কি ঠকিয়েচ ? —ঠকিয়েচি মানে চোখে ধুলো দিইচি। —কেন ? —কত দিন আগে থেকে আমি ধান ভানচি । —সত্যি ? —সত্যি গো সত্যি। নইলে চালের হিসেব নিয়ে দেখো । দু' কাঠা চাল তো হাট থেকে কিনেছিলে। কত দিন খেলে মনে নেই ? —আমায় না জানিয়ে কেন অমন করচো তুমি ? ছিঃ ছিঃ—কাদের ধান ভানো ? —হরি কপিলীদের । শু্যাম বিশ্বেসদের । —ক’ কাঠা চালের জন্তে কেন কষ্ট করা ? ওতে মান থাকে না । ব্রাহ্মণের মেয়ে হয়ে কাপালীদের ধান ভানা ? লোকে জানলে কি বলবে বল তো ? এত ছোট নজর তোমার হোল কেমন করে তাই ভাবচি । —বেশ, লোকে আমার বলে বলবে, আমার ছেলেপুলে তো দু মুঠো পেট ভরে খেতে পাবে। তা ছাড়া কাপালীদের দুই বেী ধান এলে দেয়। আমি শুধু টেকিতে পাড় দিই। —তুমি ধান এলে দিতে পারো ? এলে দেওয়া বড্ড শক্ত—না ? —এলে দেওয়া শিখতে হয়। তাড়াতাড়ি গড় থেকে যে হাত উঠিয়ে নিতে পারে সে ভাল এলে দিতে পারে। এলে দেওয়ানো শিখচি একটু একটু। গঙ্গাচরণ স্ত্রীর কথায় ভাবনায় পড়ে গেল। তার স্ত্রী যে তাকে লুকিয়ে এ কাজ করচে তা সে জানতো না । মাঝে মাঝে সে ভেবেচে অবিহি, মাত্র দু’কাঠা এক কাঠা চালে তার এক হাট থেকে আর এক হাট পৰ্য্যস্ত চলচে কি করে ? এত দিন লুকিয়ে লুকিয়ে অনঙ্গ-বে। চালাচ্চে তা তো সে জানতো না । আহ, বেচারী ! যদি ধান এলে দিতে গিয়ে কোনদিন ওর আঙুলে টেকি পড়ে যায় ?