পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१० বিভূতি-রচনাবলী দিকেও একবার কটমট, করে চেয়েচে–মুখে কিন্তু লোকটা কোন কথা বলে নি । এদিকে অনঙ্গ-বেয়ের মুশকিল হয়েচে, ছুটে পালাতে গিয়ে ওর চুল জড়িয়ে গিয়েচে শেয়াকুল কাটায় আবে কুঁচ লতায় । বসন হয়ে গেছে বিস্রস্ত । ঘামে ও পরিশ্রমে মুখ হয়েছে রাঙা । লোকটা ওর দিকে যেন অগ্নিশিখার দিকে পতঙ্গের মত ছুটে আসচে—কাছে এসে যেমন খপ করে অনঙ্গ-বেয়ের হাত ধরতে যাবে, মতি তাকে প্রাণপণ শক্তিতে মারলে এক ঠ্যালা। সঙ্গে সঙ্গে অনঙ্গ-বেী বলে উঠলো—খবরদার । কাপালী-বোঁ হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। লোকটা ধাক্কা খেয়ে মেটে আলুর গর্ভের মধ্যে পড়ে গেল । ততক্ষণ মতি এসে অনঙ্গ-বেীকে কাটার বাধন থেকে মুক্ত করবার প্রাণপণে চেষ্টা করচে । তার তখন রণরঙ্গিণী মূৰ্ত্তি । সে চেচিয়ে বললে—তোলতো শাবলটা কাপালী-বেী—মিনসের মুণ্ডুটা দিই গুড়ো করে ভেঙে—এত বড় আস্পদ ! অনঙ্গ-বোঁ ষাড়াঝোপের নিবিড়তম অংশে ঢুকে গিয়েচে ততক্ষণ, ও ভয়ে ঠক্ ঠক্‌ করে কাপচে । কারণ ঝোপ থেকে বেরুবার পথ নেই বাইরে, সে মুডি পথটাতে ওর আর মতির যুদ্ধ চলছিল । লোকটা গৰ্ত্ত থেকে উঠবার চেষ্টা করচে, মতি কাপালী-বোঁয়ের হাত থেকে শাবলটা নিচ্চে—এই পৰ্য্যস্ত অনঙ্গ-বেী দেখতে পেলে । পালাবার পথ বন্ধ। অনঙ্গ-বেী যেখানে ঢুকেচে সেখানে মানুষ আসতে হোলে তাকে হামাগুড়ি দিয়ে চার হাত-পায়ে আসতে হবে। বিষম কুঁচ কাটার লতাজাল। মাথার ওপর শাবল হাতে মতি মুচিলী রণরঙ্গিণী মূৰ্ত্তিতে দাড়িয়ে । লোকটা নিজের অবস্থা বুঝলো । মতির হাত থেকে শাবল কেড়ে নেওয়া অত সহজ হলে না । এদিক-ওদিক চেয়ে সে সে-পথেই এক-পা দু-পা করে পিছু হঠতে লাগলো। একেবারে ঝোপের প্রান্তসীমায় পৌছে লোকটা হঠাৎ পিছন ফিরে দিলে দৌড। মতি মুচিনী বললে—বেরিয়ে এসে গো বামুনদিদি—পোডারমুখে মিনসে ভয় পেয়ে ছুট দিয়েচে । অনঙ্গ-বেী তখনও কঁপিচে, তার ভয় তখনও যায় নি। কপালী-বে। ভয় পেলেও অনঙ্গবৌয়ের মত ভয় পায় নি বা তার অতটা ভয় পাওয়ার কারণ ও ঘটে নি। সে হেসে ফেললে । অনঙ্গ-বেী ধমক দিয়ে বললে—আবার হাসি আসচে কিসে পোডার মুখে —চুপ, ছড়ির রঙ্গ স্থাখে না— মতি মুচিনী বললে—ওই বোঝে। সবাই মিলে এমন ভাবটা করলে যেন সব দোষটা ওরই। কাপালী-বোঁয়ের বয়স কম, সমস্ত ব্যাপারটা তার কাছে কৌতুকজনক বলে মনে না হলে সে হাসে নি-হাসি চাপবার চেষ্টা করতে করতে বললে—ও, মতি-দিদির সে শাবল তোলার ভঙ্গি দেখে আমার তো—হি-হি-হি— অনঙ্গ-বেী ধমক দিয়ে বললে—আবার হাসে !