পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ૨૪ সে-সব গল্প শুনিলে তাই আজগুবি ও মিথ্যা মনে হইতে বাধ্য। যেখানে-সেখানে যেকোন গল্প শোনা চলে না, গল্প শুনিবার পটভূমি ও পারিপাশ্বিক অবস্থার উপর উহার মাধুৰ্য যে কতখানি নির্ভর করে, তাহা গল্পপ্রিয় ব্যক্তি মাত্রেই জানেন। গম্বর সকল অভিজ্ঞতার মধ্যে আমার আশ্চৰ্য্য বলিয়া মনে হইয়াছিল বন্তমহিষের দেবত ট tড়বারোর কথা । কিন্তু, যেহেতু এই গল্পের একটি অদ্ভূত উপসংহার আছে—সেজন্য সে-কথা এখন না বলিয়া যথাস্থানে বলিব। এখানে বলিয়। রাখি, গনু আমাকে যে-সব গল্প বলিত-তাহা রূপকথা নহে, তাহার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিষয়। গকু জীবনকে দেখিয়াছে তবে অন্তভাবে। অরণ্যপ্রকৃতির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আজীবন কাটাইয়া সে অরণ্য-প্রকৃতির সম্বন্ধে একজন রীতিমত বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। তাহার কথা হঠাৎ উড়াইয়া দেওয়া চলে না। মিথ্যা বানাইয়া বলিবার মত কল্পনাশক্তিও গনুর আছে বলিয়া আমার মনে হয় নাই । তৃতীয় পরিচ্ছেদ X গ্রীষ্মকাল পড়িতে গ্র্যাণ্ট সাহেবের বটগাছের মাথায় পীরপৈতি পাহাড়ের দিক হইতে একদল বক উড়িয়া আসিয়া বসিল, দূর হইতে মনে হয় যেন বটগাছের মাথা সাদা থোকা থোকা ফুলে ভরিয়া গিয়াছে । একদিন অৰ্দ্ধশুস্ক কাশের বনের ধারে টেবিল-চেয়ার ,পাতিয়া কাজ করিতেছি, মুনেশ্বর সিং সিপাহী আসিয়া বলিল হুজুর, নন্দলাল ওঝা গোলাওয়ালা আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে । * t একটু পরে প্রায় পঞ্চাশ বছরের কটি বৃদ্ধ ব্যক্তি আমার সামনে আসিয়া সেলাম করিল ও আমার নির্দেশ মত একটা টুলের উপর বসিল । বসিয়াই সে একটি পশমের থলে বাহির করিল। তাহার পর থলেটির ভিতর হইতে খুব ছোট একখানি জাতি ও দুইটি মুপারি বাহির করিয়া সুপারি কাটিতে অরম্ভ করিল। পরে কাটা সুপারি হাতে রাখিয়া দুই হাত একত্র করিয়া আমার সামনে মেলিয়া ধরিয়া সমস্তমে বলিল—মুপারি লিজিয়ে হুজুর। সুপারি ও-ভাবে খাওয়া অভ্যাস না-থাকিলেও ভদ্রতার খাতিরে লইলাম। জিজ্ঞাসা করিলাম—কোথা হতে আসা হচ্ছে, কি কাজ ? তাহার উত্তরে লোকটি বলিল, তাহার নাম নন্দলাল ওঝা, মৈথিল ব্রাহ্মণ । জঙ্গলের উত্তর-পূৰ্ব্ব-কোণে কাছার হইতে প্রায় এগার মাইল দূরে মুঠিয়া- দিয়ারাতে তাহার বাড়ী। বাড়ীতে চাষবাস আছে, কিছু মুদের কারবারও আছে—সে অাঁসিয়াছে তার বাড়ীতে আগামী পূর্ণিমার দিন আমার নিমন্ত্ৰণ করিতে—আমি কি তাহার বাড়ীতে দয়া করিয়া পদধূলি দিতে রাজী আছি ? এ সৈৗভাগ্য কি তাহার হইবে ?