পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু \రి$లి কোথা থেকে নাম করবার নিয়ম এনে ফেললে। অথচ কেমন একটা অমুকম্প হ’ল ওর ওপর, ভালো মনে কথার জবাব না দিয়েও পারলুম না। বললাম—তার কি কোন নিয়ম আছে, তা নেই। দু’চারটে ভালো লেখা বেরুতে বেরুতে ক্রমশঃ নাম বেরোয়! লোকে আপনার লেখা পড়ে যদি খুশি হয়, তবে নাম বেরুতে আর কি দেরি হবে ? খানিকটা চুপ ক'রে থেকে আমার দিকে চেয়ে আনন্দমুরে বললে—অনেকদিন থেকে আমার ইচ্ছে কোন লেখকের সঙ্গে আলাপ করি । কলকাতায় থাকতে একবার দেবব্রত মুখুয্যের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন দেবব্রত বাবুর অপরিণত বইটা সবে বেরিয়েচে —সারা রাত ধরে জেগে বইখানা পড়লাম, এমন ভালো লাগল আর এমন একটা ইনস্পিরেশন পেলাম—তার পরদিন আমিও একখানা ওই রকম নভেল লিখব ভাবলাম । আট-দশ চ্যাপ্টার লিখেও ফেললাম। কাস্তিকে দেখাতে গেলাম, সে বললে এর প্লট, ভাব, ভাষা, সব নাকি দেবব্রত বাবুর বইখানার মতো হচ্চে। আমার ঐ এক দোষ—যখন যে বই পড়ি, লিখতে বসলে সেই বইখানার মতো প্লট আর ভাষা হয়ে যায়। তা সেদিন দেবব্রত বাবুর সঙ্গে দেখা হ’ল না, তিনি ওপর থেকে বলে পাঠালেন তিনি বড় ব্যস্ত । তাকে উৎসাহ দেবার জন্তে তার একটা গান আবার উন্টে পড়তে লাগলাম। . সে হাসি-হাসি মুখে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল। ও গানট-সম্বন্ধে আমার প্রশংসার পুনরাবৃত্তি, অত্যন্ত আগ্রহ ও আনন্দের সঙ্গে শুনলে-জীবনে বোধ হ’ল এই সর্বপ্রথম নিজের লেখার প্রশংসা শুনচে । কথাবাৰ্ত্তার মধ্যেও একবার ঘরের চারিধারে আর একবার আমার মুখের দিকে চেয়ে খুশির মুরে বললে—আমি কোন লেখকের এত কাছে বসে কখনো গল্প করিনি। এত বেশীক্ষণ আমার সঙ্গে কেউ কথাও বলেনি। আর মিনিট কুড়ি পরে সে অনিচ্ছাসত্ত্বেও খাতা-পত্র গুটিয়ে নিয়ে উঠল—ভাবলে বোধ হয় আর বেশীক্ষণ থাকলে আমি পাছে বিরক্ত হই। দাড়িয়ে উঠতে গিয়ে কি ভেবে আবার বসল, ভয়ে ভরে বললে—একটা কথা বলব ? কথাটা বলতে সাহস হয় না। অত কম টাকায় কি আপনি রাজী হবেন ? আমি আপনাকে দশ টাকা ক'রে মাসে মাসে দিলে, আমাকে লেখা শিখিয়ে দেবেন ? ওর এই কথাটায় কেমন একটা কষ্ট হ’ল ওর জন্তে । মাত্র উনত্রিশ টাকা মাইনে থেকে আমার দশ টাকা দিতে রাজী-বাবি নিশ টাকাতেই এখানকার ও বাড়ীর খরচ চালাতে রাজী—লেখক হবার এতই সাধ । আমি তাকে বললাম—তার কোন টাকাকড়ি লাগবে না। আমি সব ছুটিতে এখানে আসিনে, যখন আসব, তখন আমার দ্বার যতদূর উপকার হয়, খুশির সঙ্গে করব। সে মহা আনন্দ ও উৎসাহের সঙ্গে খাতা-পত্র বগলে নিয়ে প্রণাম ক'রে ঘর থেকে বার হয়ে গেল। বাইরে গিয়ে আবার জানালার কাছে দাড়িয়ে বললে—তা হলে আমার হবে ? না হবার কিছু দেখলেন কি ? —হবে নিশ্চয়ই, না হবার কিছুই দেখিনি। তবে সাধন চাই।