পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8е е বিভূতি-রচনাবলী আর কলিকাতায় যাওয়া হইবে না . নিখুদা’র সঙ্গে দেখাও আর হইবে না। তাহার বিবাহের সম্বন্ধ খোজা চলিতেছে, স্কুল ছাড়াইয়া অনিয়া বাড়ীতে রাখা হইয়াছে। বয়স ষোল ছাড়াইতে চলিল কি না! আর বাডীর বাহির হইবার হুকুম নাই। কলিকাতা চিত্রা •• রূপবাণী কেতকী শোভা, নিধুদ , সব স্বল্প ..এ জন্মের মত সব ফুরাইয়াছে সোনার স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। আশ্চৰ্য্য নয় যে, তেইশ বছরের বিধবা রাধার ঘনিষ্ঠতা তাহার ভালো লাগে না । নাপিত-বেী তাহার পায়ের তলায় পোষা কুকুরের মতো পডিয়া থাকে, কোনো রকমে সহ করিয়া থাকিতে হয়। ঝি-চাকরকেও তো লোকে সহ করে। রাধা বলিল—ভাই সুবি, তোর গলাখানা যদি একবার পেতাম ! হিংসে হয় সত্যি । সুবি নাপিত-বৌয়ের খোসামোদ ও রাধার গায়ে পডিয়া আলাপ জমানোর চেষ্টা ঠেলিয়া ফেলিয়া চায়ের পাত্র লইয়া চলিয়া গেল । সে মরিতেছে নিজের জালায়, এমন সময়ে এ-সব গুণকা দ্যাক কথা তাহার ভালো লাগে না । জেলেপাড়ার ঘাটে ছিপছিপে, ফরসা, থান-পরা জেলে-বেী কাপড় কাচিতে নামিল । রাধা বলিল—ও রামুর মা, রামুর কোনো খবর পেলে ? জেলে-বোঁ বলিল—কোথায় দিদিঠাকরুণ—আজ পাচ মাস ছেলে গিয়েচে, একথান পত্তর নয়—টাকা পাঠানে চুলোয় যাক—তার টাকা পাঠাতে হবে না। আমি ধান ভেনে, ক্ষার কেচে, গতর খাটিয়ে যেমন চালচ্চি, এমনি চালিয়ে যেতে পারলে বাচি । ছেলের রোজগার খেতে চাইনে, সে ভালো থাকুক, নিজের খরচ নিজে করুক, তাতেই আমি খুশি । কিন্তু বলে৷ তো দিদিঠাকরুণ, একখানা চিঠি নেই আজ পাচ মাস, আমি কি ক’রে ঘরে থাকি ? রামু লালমণিরহাটের রেলে কি একটা চাকরি পাইয়া গিয়াছে। মাকে একবার পাচটি টাকা পাঠাইয়াছিল—তারপর এখন লেখে যে, সামান্ত মাইনেতে তাহার কুলার না, মাকে এখন আর টাকা পাঠাইতে পারিবে না । মা যেন কষ্ট করিয়া পূজা পৰ্য্যন্ত কোনো রকমে চালাইয়া লয়! ছেলের কষ্ট হইবার ভয়ে মাও আর টাকা চায় না । কষ্টে-স্থষ্টেই চালায়। রাধার জেলে-বেীকে ভালো লাগে বড় । এমন ধরনের মেয়ে এ গ্রামে ব্রহ্মণ কারস্থের ঘরেও নাই। এত সুন্দর মন ওর, পরের উপকারে প্রাণ ঢালির দিতে এমন লোক সত্যিই গারে আর নাই। শুধু রাধাদের বলিয়া নয়, লোকের চিড়ে কুটিতে জেলে-বেী, ধান ভানিতে জেলে-বে, যাহাদের বাড়ীতে পুরুষ মানুষের বিদেশে থাকে, শুধু বাড়ীতে মেয়েরা আছে—এক ক্রোশ দূরবর্তী বাজার হইতে তাদের হাট-বাজার করিয়া দিতে জলে-বেী, কুটুম্ব বাড়ীতে তত্ত্বতাবাস পাঠাইতে কিংবা নব-বিবাহিত মেয়ের সঙ্গে শ্বশুরবাডী যাইতে জেলে-বেী—জেলে-বেী না হইলে এ গায়ের লোকের চলে না। অথচ এ সবের জন্তে জেলে বেী কারো কাছে একটি পয়সা প্রত্যাশ করে না—পাডার পাঁচজনের বিনি পয়সায় বেগার থাটির বেড়ানোই তার অভ্যাস । গত জ্যৈষ্ঠ মাসে রাধার মনে আছে—আমবাগানের পথ দিয়া সে ঘাটে যাইতেছে-জেলেবেী আম কুড়াইতেছে বাগানে।