পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

808 বভূতি-রচনাবলী দেয়াড়ের চর হইতে, পাট-বোঝাই গরুর গাড়ীর দল ক্যাচ কোচ করিতে করিতে ঘাটের পথের রাস্ত দিয়া কোথায় যেন যায়। গরুকে জল দেখাইয়া আসিয়া তাহার বড় ইচ্ছা করে স্ববিদের বাড়ীতে সুবির সঙ্গে বসিয়া একটু আধটু গল্প-গুজব করে, দু একখানা বর্ণগুচি পড়িয়া শোনায়— (কারণ সে বই পড়িতে জানে না) গান শোনায়—কিন্তু হায় রে দুরiশা ! গায়ে পড়িয়া আলাপ জমাইতে গেলে সুবি গভীর ঔদাস্তের মুরে বলিল—হঁ্যা, যাই রাধাদি । কত কাজ পড়ে রয়েচে, বিমুর সেই মোজা জোড়াটা বুনতে বুনতে ফেলে রেখেছি, সেটা সম্পূর্ণ শেষ করে ফেলি গিয়ে। বসে তুমি—মা’র সঙ্গে কথা বলে । তার পর বেলা পড়িয়। যাইবে। রোয়াকে কাস্তে বঁটি পতিয়া একরাশ বিচুলি কাটিতে হইবে, গরুকে জাব খাওয়াইতে। মাঠ হইতে গরুর অবশ্য মা-ই আনে, কারণ এ সময়টা সে কাজে এত ব্যস্ত থাকে যে, নদীর ধারের মাঠ হইতে গরু আনিবার সময় তার বড় একটা হয় না। তারপর বাইরের বেড়ায় গ৷ হইতে শুকনে কাপড় তুলিতে হইবে, ঘর বাট দিতে হইবে, ল্যুরে তেল পুরিয়া কাচ মুছিয়া রাখিতে হইবে, গা ধুইয়া আসিতে হইবে, পাতকুর তলায় সাজ জুলিয়াই বাবার মিছরি মরিচ গরম করিয়া দিয়া রাত্রের ভাত চড়াইতে হইবে। সকলের খাওয়া দাওয়া সারা হইলে সে নিজে এক মুঠ চালভাজা তেল-মুন মাখিয়া এক ঘটি জল থাইয়া বাবার পায়ে বাতের তেল মালিশ করিতে বসিবে । এই সব সারিতে রাত সাড়ে দশটার গাড়ী গড় গড় করিয়া মাত লীর বিলের পুলের উপর দিয়া যাইবার শব্দ পাওয়া যাইবে। তবে দিনের মতে ছুটি । এই চলিবে দিনের পর দিন, তিন শো ত্রিশ দিন । হঠাৎ নবু জানালার বাহিরে হাত বাড়াইয়া আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া বলিল—উই রাণাঘাটের ইস্টশন দেখা যাচ্ছে দিদি রাধার চমক ভাঙিল। সে মুখ বাড়াইয়া দেখিল, প্রকাণ্ড ট্রেনটা অজগর সাপের মতো বাকিয় রেল স্টেশনের নিকটবৰ্ত্তী হইতেছে। যেখানে তার ইঞ্জিন, সেখানে দূরে একটা বড় বাড়ী ও টিনের ছাদ দেওয়া দালান-মতো দেখা যাইতেছে। রাণাঘাট পৌছিয়া গেল এর মধ্যে ! প্লাটফৰ্ম্মে নামিয়াই নবু বলিল—একখানা পাউরুটি কিনে দ্য গুনা দিদি ! কি খিদেই পেরেছে—ডাকুব ? আঁচলের গেরো খুলিয়া তিনটি পয়সা বাহির করিয়া রাধা ভাইকে একথান পাউরুটি কিনিয়া দিল। তাহার নিজেরও খুব ক্ষুধা পাইয়াছে—সেও তো সারাদিন কিছু খায় নাই । ভাইকে বলিল—আর কিছু খাবি ? এক কাজ কর বরং, চল বাইরের দোকান থেকে আলুর দম কিনে দিই এক পয়সার। পাউরুটি দিয়ে থা, পেট ভরবে এখন। নবু বলিল-তুমি কিছু থাবে না, দিদি ? —আমি রেলের কাপড়ে কি খাব ? চ খেতে পারি, ওতে দোষ নেই—যা দিকি ঐ চা বিক্রি করচে, জেনে অীয় কত করে নেবে এক পেয়ালার দাম । নবু জানিয়া আসিয়া বলিল—এক পেয়ালা চা চার পয়সা, দিদি।