পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

89e বিভূতি-রচনাবলী দৃপ্ত অপূৰ্ব্ব বিশেষ করে রাস্ত যখন খুল্ল পাহাড়ের ওপর ওঠে। মনে আছে, আমি তাকে এ পথের দৃশ্বের কথা খুটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি তত বর্ণনা দিতে পারেন নি, মোটামুটি বলেছিলেন, ‘ভালো’। কিন্তু শুধু "ভালো’ বা চমৎকার শুনে আমার মন তৃপ্ত হয় নি, আমি চেয়েছিলাম যা, তিনি তা আমায় দিতে পারেন নি। সে আজ অন্ততঃ সতেরো আঠারো বছর আগের কথা । তখন জানতাম নু,একদিন শরৎকালের শেষরাত্রের জ্যোৎস্নায় বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মোটরে সেই অর" পথে গ্রনাে ভ্ৰমণ আমার দৃষ্ট টবে। সেই ভদ্রলোকের কথা মনে পড়লো এতদিন পরে। তিনিই প্রথম এ রাস্তার সৌন্দর্য্যের কথা আমায় বলেন, এ পথ সম্বন্ধে আমার কৌতুহল জাগিয়ে তোলেন। যতদূর জানি, তিনি এখন আর ইহলোকে নেই, শেষ বয়সে বিদেশে কোথায় কণ্টক্টিারি করতেন, সেখানে মারা যান। তিনি কিছুযায় বাড়িয়ে বলেন নি দেখলুম। পথ ঘুরে ঘুরে যখন উঠতে স্বাগবাম টেবে। পাহাড়ে, তখন নহোলৈ,এ পথে সবারই একবার বেড়িয়ে যাওয়া উচিত। অ } পথেৰু ধারে খ্ৰীষ্ট বড় গাছপালা, বড় বড় পাথর, মায়াময় শিখরদেশ জ্যোংস্কামাখা, বনের আড়ালে লুকোচুরি খেলচে । প্রকৃতিরসিক পরেশবাৰু দীর্ঘমিখাস ফেলে বললেন—চমৎকার! “আমরা সকলেই এক বাক্যে র্তার কথায় সায় দিলুম। পাহাড়ের ওপরে রাস্তার দুধারে জ্যোৎস্নালোকিত বনভূমির কি অপূৰ্ব্ব শোভা । কেঁদ . কালো কালে পাতায় জ্যোংস্ক পড়ে চকৃচকু করছে। ঘন, নির্জন বনানীর নৈশ নিস্তব্ধতা মনে ভয়-মিণ্ডিত রহস্তের উদ্রেক করে । আমি বললাম—এখানে মোটর থামিয়ে একটু বনটা দেখা স্বাক— স্ববোধ স্থপত্তি করলো—এখানে বাঘের বিশেষ করে এই রাতের বেলায়। মোটর থামিয়ে নামা উচিত হবে না । মিঃ সিংহ বললেন–কিছু হবে না। নাম যাক। পরেশবাবুও আমাদের মতেই মত দিলেন। স্বতরাং শেষ পর্য্যন্ত মোটর থামানে হোল— আমি, পরেশবাবু ও মিঃ সিংহ নেমে রাস্তার ধারে বনের প্রাস্তে একখানা বড় পাথরের ওপর বসলাম। স্ববোধ গাড়ীর মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো। সে নৈশপ্রকৃতির শোভা নিজের চোখে দেখবার জিনিস। লোকালয় থেকে বহুদূরে পাহাড়ের মাথায় ঘন বন, শেয় রাত্রের জ্যোৎস্নায় আমরা ক'টি প্রাণী সেখানে চুপ করে বসে আছি, যে কোনো মুহূর্তে বাঘ বা যে কোনো বস্তজন্তু বেরুতে পারে, বস্তহস্তীর তো কথাই নেই—এসব বনে হাতীর সংখ্যাই বেশি, ভালুকও যথেষ্ট। বিপদের মধ্যেই ভ্রমণের আসল আনন্দ, অত্যন্ত নিরাপদ স্থানে, সে জায়গা যতই স্বন্দর করে সাজানো হোক না কেন, বেড়িয়ে সে ভয়, সে উত্তেজনার সন্ধান মেলে না। অনুভূতির নতুনত্বই মানুষের জীবনের বড় সম্পদ। মিনিট পনেরো পরে আমরা মোটরের কাছে গিয়ে স্থবোধকে ঘুম থেকে ওঠালুম। এতক্ষণ