পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Woo বিভূতি-রচনাবলী মেয়েটি ভাত ফেলিয়া দিবার প্রস্তাবে বিস্মিত হইয়া আমাদের মুখের দিকে চাহিল। ভাত ফেলির দিবে কেন ? তবে সে খাইবে কি ? ওঝাজীদের বাড়ী থেকে কাল রাতে ঐ ভাত দুটি তাহাকে খাইতে দিয়া গিয়াছিল। আমার মনে পড়িল ভাত এ-দেশে মুখাদ্য বলিয়। গণ্য, আমাদের দেশে যেমন লুচি কি পোলাও । কিন্তু একটু কড়া স্বরেই বলিলাম—উঠে এখুনি ভাত ফেলে দাও আগে । মেয়েটি ভয়ে ভয়ে উঠিয়া থোরার ভাত ফেলিয়া দিল । তাহার স্বামীকে কিছুতেই বাচানো গেল না। সন্ধ্যার পরেই বৃদ্ধ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিল। মেয়েটির কি কান্না ! রাজুও সেই সঙ্গে কাদিয়া আকুল । আর একটি বাড়ীতে রাজু আমায় লইয়া গেল। সেটা রাজুর এক দূরসম্পৰ্কীয় শালার বাড়ী । এখানে প্রথম আসিয়া এই বাড়ীতেই রাজ উঠিয়াছিল। খাওয়া-দাওয়া এখানেই করিত। এখানে মা ও ছেলের একসঙ্গে কলেরা, পাশাপাশি ঘরে দুষ্ট রোগী থাকে, এ উহাকে দেখিবার জন্য ব্যাকুল, ও ইহাকে দেখিবার জন্ত ব্যাকুল । সাত-আট বছরের ছোট ছেলে । ছেলে প্রথমে মারা গেল । মাকে জানিতে দেওয়া হইল না । আমার হোমিওপ্যাথি ঔষধে মায়ের অবস্থা ভাল হইয়া দাডাইতে লাগিল ক্রমশ: মা কেবলই ছেলের খবর নেয়, ও-ঘরে ছেলের সাড{শব্দ পা ওয়া যাচ্ছে না কেন ? কেমন আছে সে ? আমরা বলি—তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে—বুমচ্ছে । চুপি চুপি ছেলের মৃতদেহ ঘর হইতে বাহির করা হইল। গ্রামের লোক স্বাস্থের নিয়ম একেবারে জানে না । একটি মাত্র পুকুর, সেই পুকুবেই কাপড় কাচে, সেখানেই স্নান করে । স্নান করা আর জল পান করা যে একই কথা ইহা কিছুতেই তাহদের বুঝাইতে পারলাম না। কত লোক কত লোককে ফেলিয়া পলাইয় গিয়াছে। একটা ঘরের মধ্যে একটা রোগী দেখিলাম, সে বাড়ীতে আiব লোক নাক্ট । রোগগ্রস্ত লোকটি ঐ বাড়ীর ঘর-জামাই, স্ত্রী আর বছর মারা গিয়ছে। তন্ত্ৰাচ লোকটার অবস্থা খারাপ বলিয়াই হউক বা যে কারণেই হউক, শ্বশুরবাড়ীর লোকে তাহীকে ফেলিয়। পলাইয়াছে । রাজ তাঁহাকে দিনরাত সেবা করিতে লাগিল । আমি ঔষধপত্রের ব্যবস্থা করিয়া দিলাম। লোকট শেষ পর্য্যন্ত বাচিয়া গেল। বুঝিলাম, শ্বশুরবাড়ীর অন্নদাস হিসাবে তাহার অদৃষ্টে এখনও অনেক দুঃখ আছে। রাজুকে গ’ল বাহির করিয়া চিকিৎসার মোট উপার্জন গণনা করিতে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম—কত হল, রাজু ? রাজু গুনিয়া-গাথিয়া বলিল—এক টাকা তিন আন । ইহাতেই সে বেশ খুশী হইয়াছে। এদেশের লোক একটা পয়সার মুখ সহজে দেখিতে পায় না, এক টাকা তিন আনা উপার্জন এথানে কম নহে। রাজুকে আজ পনের-ষোল দিন, ডাক্তারকে ডাক্তার, নার্সকে নার্স, কি খাটুনিটাই থাটিতে হইয়াছে।