পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆశి বিভূতি-রচনাবলী ভীষণ শঙ্খচূড় সাপের ভয়ে, এ অঞ্চলের কাঠুরিয়ারাও কখনও ওখানে যার না। দিক্‌চক্রবালে দীর্ঘ নীলরেখার মত পরিদৃশুমান এই পাহাড় ও বন দুপুরে, বিকালে, সন্ধ্যায় কত স্বপ্ন আনে মনে । একে তো এদিকের সারা অঞ্চলটাই আজকাল আমার কাছে পরীর দেশ বলিয়া মনে হয়, এর জ্যোৎস্না, এর বন-বনানী, এর নিজনতা, এর নীরব রহস্ত, এর সৌন্দৰ্য্য, এর মানুষজন, পাখীর ডাক, বন্ত ফুলশোভা—সবই মনে হয় অদ্ভুত, মনে এমন এক গভীর শান্তি ও আনন্দ আনিয়া দেয়, জীবনে যাহা কোথাও কখনও পাই নাই। তার উপরে বেশী করিয়া অদ্ভূত লাগে ওই মহালিখারূপের শৈলমাল ও মোহনপুর রিজার্ভ ফরেস্টের সীমারেখা । কি রূপলোক যে ইহারা ফুটাইয়া তোলে দুপুরে, বৈকালে, জ্যোৎস্না-রাত্রে— কি উদাস চিন্তার স্বষ্টি করে মনে! একদিন পাহাড় দেখিব বলিয়া বাহির হইলাম । ন’ মাইল ঘোড়ায় গিয়া দুই দিকের দুই শৈলশ্রেণীর মাঝের পথ ধরিয়া চলি । দুই দিকের শৈলসাহু বনে ভরা, পথের ধীরে দুই দিকের বিচিত্র ঘন বনঝোপের মধ্য দিয়া মুড়িপথ আঁকিয়া বাকিয়া চলিয়াছে, কখনও উচুনীচু, মাঝে মাঝে ছোট ছোট পাৰ্ব্বতা ঝরণা উপলস্কৃিত পথে বহিয়া চলিয়াছে, বন্ত চন্দ্রমল্লিকা ফুটিতে দেখি নাই, কারণ তখন শরৎকাল, চন্দ্রমল্লিকা ফুটিবার সময়ও নয়, কিন্তু কি অজস্র বন্স শেফালিবৃক্ষ বনের সর্বত্র, ফুলের খই ছড়াইয়া রাখিয়াছে বৃক্ষতলে, শিলাখণ্ডে, ঝরণার উপলাকীর্ণ তীরে। আরও কত কি বিচিত্র বন্যপুপ ফুটিয়াছে, বর্ষাশেষে, পুম্পিত সপ্তপর্ণের বন, অর্জন ও পিয়াল, নানাজাতীয় লতা ও অকিডের ফুল—বহুপ্রকার পুষ্পের মুগন্ধ একত্র মিলিত হইয়া মৌমাছিদের মত মানুষকেও নেশায় মাতাল করিয়া তুলিতেছে । এতদিন এখানে আছি, এ সৌন্দৰ্য্যভূমি আমার কাছে অজ্ঞাত ছিল। মহলিখারূপের 'জঙ্গল ও পাহাড়কে দূর হইতে ভয় করিয়া আসিয়াছি, বাঘ আছে, সাপ আছে, ভালুকের নাকি লেখাজোখ নাই—এ পর্য্যন্ত তো একটা ভালুক-ঝেড় কোথাও দেখিলাম না । লোকে যতটা বাড়াষ্টয়া বলে, ততটা নয় । , - ক্রমে পথটার দু-ধারে বন ঘনাইয়। পথটাকে যেন দু-দিক হইতে চাপিয়া ধরিল। বড় বড় গাছের ভালপাল পথের উপর চন্দ্ৰতিপের স্বষ্টি করিল। ঘন-সন্নিবিষ্ট কালো কালো গাছের গুড়ি, তাদের তলায় কেবলই নানাজাতীয় ফার্ণ, কোথা ও বড় গাছেরই চারা । সামনে চাহিয়া দেখিলাম পথটা উপরের দিকে ঠেলয়া উঠিতেছে, বন আরও কৃষ্ণায়মান, সামনে একটা উত্তঙ্গ শৈলচুড়া, তাহার অনাবৃত শিখরদেশের অল্প নীচেই যে-সব বন্যপাদপ, এত নীচু হইতে সেগুলি দেখাষ্টতেছে যেন ছোট ছোট শেওড়া গাছের ঝোপ । অপূৰ্ব্ব, গম্ভীর শোভা এই জায়গাটায়। পথ বাহিয়া পাহাডের উপরে অনেক দূর উঠিলাম, আবার পথটা নামিয়া গড়াইয়৷ গিয়াছে, কিছুদূর নামিয়া আসিয়া একটা পিয়ালতলায় ঘোড়া বাধিয়া শিলাখণ্ডে বসিলাম— উদ্দেশু, শ্রান্ত অশ্বকে কিছুক্ষণ বিশ্রামের অবকাশ দেওয়া । সেই উত্তঙ্গ শৈলচুড়। হঠাৎ কথন বামদিকে গিয়া পড়িয়াছে ; পাৰ্ব্বত্য অঞ্চলের এই মজার ব্যাপার কতবার লক্ষ্য করিয়াছি, কোথা দিয়া কোনটা ঘুরিয়া গিয়া আধ রশি পথের ব্যবধানে