কখনো শোনে নাই। ও সকল কথার অর্থ সে বুঝিতেছিল না, কিন্তু অজানা শব্দ ও ললিত পদের ধ্বনি, ঝঙ্কায়-জড়ানো এক অপরিচিত শব্দসদীত, অনভ্যস্ত শিশুকৰ্ণে অপূৰ্ব ঠেকিল এবং লৰ কথার অর্থ না বোঝার দূরণেই কুহেলি-বেয়া অস্পষ্ট শব্দ-সমষ্টির পিছন হইতে একটা অপূৰ্ব দেশের ছবি বার বার উকি মারিতেছিল। বড় হইয়া ভুলে পড়িবার সময় সে বাহির করিয়াছিল ছেলেবেলাকায় এই মুখস্থ শ্রতিলিখন কোথায় আছে-- “এই সেই জনস্থান মধ্যবর্তী প্রস্রবণ গিরি যাহার শিখরদেশে সতত সঞ্চারমাণ জলধর পটল সংযোগে নিরন্তর নিবিড় নিলীমায় অলংকৃত অধিত্যকা প্রদেশ ঘনসন্নিবিষ্ট বিবিধ বনপাদপসমূহে সমাচ্ছন্ন থাকাতে স্নিগ্ধ শীতল ও রমনীয়--পাদদেশে প্ৰসন্ন সলিল৷ গোদাবী তরঙ্গ বিস্তাৱ করিয়া--” সে ঠিক বলিতে পারে না, বুঝাইতে পারে না, কিন্তু সে জানে—তাহার মনে হয়, অনেক সময়েই মনে হয়-সেই ষে বছর-দুই আগে কুঠির মাঠে সরস্বতী পূজার দিন নীলকণ্ঠ পাখী দেখিতে গিয়াছিল, সেদিন মাঠের ধার বাহিয়া একটা পথকে দূরে কোথায় যাইতে দেখিয়াছিল লে। পথটার দু’ধারে যে কত কি অচেনা পাখী, অচেনা গাছপালা, অচেনা কনবোপঅনেকক্ষণ সেদিন সে পথটার দিকে একদৃষ্টি চাহিয়া ছিল। মাঠের ওদিকে পথটা কোথায় ৰে। চলিয়া গিয়াছে তা ভাবিয়া সে কুল পায় নাই। তাহার বাবা বলিয়াছিল-ও সোনাভাঙা মাঠের রাস্তা, মাধবপুৱ-দশঘরা হয়ে সেই ধলচিতের খেয়াঘাটে গিয়ে মিশেচে । ধলচিতের খেয়াঘাটে নয়, সে জানিত, ও পথটা আরও অনেক দূরে গিয়াছে; রামায়ণ, aykisigasg aya সেই অশখগাছের সকলের চেয়ে উঁচু ভালটার দিকে চাহিয়া থাকিলে ঘাঁহার কথা মনে উঠে --সেই বহুদূরের দেশটা ৷ শ্ৰতিলিখন শুনিতে শুনিতে সেই দুই-বছর-আগে-দেখা পথটার কথাই তাহার মনে হইয়া 例阿1 ঐ পথের ওধারে অনেক দূরে কোথায় সেই জনস্থান-মধ্যবর্তী প্ৰস্ৰৱণ-পৰ্বত! বনঝোপের দিপ্ত গদ্ধে, না-জানার ছায়া নামিয়া, আসা বিকিমিকি সন্ধ্যায়, সেই স্বপ্নলোকের ছবি তাহাকে খবাকু করিয়া দিল। কতদূরে সে প্রস্রবণ-গিরির উন্নত শিখর, আকাশপথে সঙ্গত-সঞ্চারমাণ মেঘমালায় যাহার প্রশান্ত, নীল সৌন্দৰ্য্য সর্বদা আবৃত থাকে ? সে বড় হুইলে যাইয়া দেখিবে । কিন্তু সে বোতলীকণ্টকিত তাঁট, বিচিত্রপুলিন গোদাবরী, সে খামল জনস্থান, নীল মেঘমালায় যোৱা সে অপূৰ্ব শৈলীগ্রন্থ, রামায়ণে বাণিত কোনো দেশে ছিল না। বাশ্মীকি বা
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/১২৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।