পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের পাঁচালী ዓe আবার কানে গেলা-বেঙ্কলি বুঝি! ও অপু, বা রে, তাখো মজা ছেলের । গরম গরম খাবি --আমি তাড়াতাড়ি ঘাট থেকে এসে ভাঙ্গতে লাগলাম-ও অপুউ-উ- অপু এক দুট দিয়া নীলুদের বাড়ী গিয়া পৌছিল। অনেক ছেলে জুটিয়াছিল, অপু আসিবার আগেই খেলা সাঙ্গ হইয়া গিয়াছে। নীলুবলিল-চল অপু, দক্ষিণ মাঠে পাখীর ছানা দেখতে যাবি ? অপু রাজি হইলে দুজনে দক্ষিণ মাঠে গেল। ধান ক্ষেতের ওপারেই নবাবগজের ফঁাধা সড়কটি পূর্ব পশ্চিমে লম্বা হইয়া যেন মাঠের মাঝখান চিরিয়া চলিয়া গিয়াছে। গ্ৰাম হইতে এক মাইলের উপর হইবে। অপু এতদূর কখনো বেড়াইতে আসে নাই-তাহার মনে হইল যেন সমস্ত পরিচিত জিনিসের গাওঁী ছাড়াইয়া কোথায় কতদূরে নীলুদা তাহাকে টানিশা আনিল! একটুখানি পরেই সে বলিল, বাড়ী চল নীলুদা, আমায় মা বাকবে, সন্দে হয়ে যাবে, আমি এক গাবতলার পথ দিয়ে যেতে পারবো না। তুমি বাড়ী চল--- ফিরিতে যাইয়া নীলু পথ হারাইয়া ফেলিল। ঘুরিয়া ফিরিয়া কাঁহাদের একটা বড় আম বাগানের ধারা দিয়া একটা পথ মিলিল। সন্ধ্যা হইবার তখনও কিছু বিলম্ব আছে, আকাশে আবার মেঘ খণাইয়া আসিতেছে-এমন সময় চলিতে চলিতে নীলু হঠাৎ থমকিয়া দাড়াইয়া অপুর কনুই-এটান দিয়া সম্মুখ দিকে চাহিয়া ভয়ের স্বরে বলিল-ও তাই অপু ! অপু সঙ্গীর ভয়ের কারণ বুঝিতে না পারিয়া বলিল-কি রে নীলুদা ? পরে সে চাহিয়া দেখিল, যে সুড়ি পথটা দিয়া তাহারা চলিতেছিল, তাহা কাহাদের উঠানে গিয়া শেষ হইয়াছে --উঠানে একখানা ছোট চালাঘর ও একটা বিলাতী আমডার গাছ । তাহার কোনো কথা জিজ্ঞাসা করিবার পূর্বেই নীলু ভয়ের সুরে বলিয়া উঠিল-আতুরী ডাইনীর বাড়ী ! অপুত্র মুখ শুকাইয়া গেল-আতুরী ডাইনীর বাড়ী !-সিদ্ধাবেলা কোথায আসিয়া তাহারা পডিয়াছে। কে না জানে যে, ওই উঠানের গাছে চুরি করিয়া বিলাওঁ’, আমড়া পাড়িবার অপরাধে ভাইনীটা জেলেপাডার কোন এক ছেলের প্রাণ কান্ডিয়া লইয়া কচুর পাতায় বঁাধিয়া জলে ডুবাইয়া রাখিয়াছিল, পরে মাছে তাহ খাইয়া ফেলিবার সঙ্গে সঙ্গে বেচারীর আমড়া খাইবার সাধ এ জন্মের মত মিটিয়া যায়! কে না জানে সে ইচ্ছা করিলে চোখের চাহনিতে ছোট ছেলেদের রক্ত চুবিয়া খাইয়া তাঁহাকে ছাডিয়া দিতে পারে, যােহাৱা রক্ত খাওয়া হইল, সে কিছুই জানিতে পাব্লিবে না, কিন্তু বাড়ী গিয়া খাইয়া-দাইয়া সেই যে বিছানায় শুইবে আর পরদিন উঠবে না! কতদিন শীতের স্বান্ত্রে লেপের তলায় তইষা দিদির মুখের আতুরী ডাইনীর গল্প শুনিতে শুনিতে সে বলিয়াছে।-রাত্ৰিতে তুই ওসব গল্প বলিসনে দিদি, আমার ভয় করে,-তুই সেই কুঁচবয়ণ রাজকন্যের গল্পটা বল দিকি ? ঝাপসা দৃষ্টিতে সে সম্মুখে চাহিয়া দেখিতে গেল বাড়ীর কেহ আছে কিনা এবং চাহিবার সঙ্গে সঙ্গেই তাহার সমস্ত শরীয় যেন জমিয়া হিম হইয়া গেল।--বেড়ায় বাঁশের আগডের কাছে অঙ্গ কেহ নয়, একেবারে স্বয়ং আতুৰী ডাইনীই তাঁহাদেৱ-এমন কি যেন শুধু তাহান্নাই দিকে চাহিয়া দাড়াইয়া !e•• w