পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের পাঁচালী yr ঢুকিয়া উঠানে পা দিতেই কি যেন একটা সরু দডির মত বুকে আটকাইল ও সঙ্গে সঙ্গে কি যেন একটা পটাং করিয়া ছিণ্ডিয়া ঘাইবার শব্দ হুইল এবং দুদিক হইতে দুটা কি, উঠানে চিলা হইয়া পড়িয়া গেল। সমস্ত কাৰ্যটি চক্ষের নিমেযে হুইয়া গেল, কিছু ভাল করিয়া দেখিবার কি বুঝিবার পূর্বেই। অল্পখানিক পরেই অপু বাড়ী আসিল। দরজা পায় হুইয়া উঠানে পা দিতেই সে থমকিরা দাড়াইয়া গেল।--নিজের চক্ষুকে বিশ্বাস করিতে পারিল না-এ কি ! বা রে আমায় টেলিগিরাফের তার ছিড়লে কে ? ক্ষতির আকস্মিকতায় ও বিপুলতায় প্রথমটা সে কিছু ঠাহর করিতে পারিল না। পরে একটু সামূলাইয়া লইয়া চাহিয়া দেখিল উঠানের মাটিতে ভিজা পায়ের দাগ এখনও মিলায় নাই। তাহার মনের ভিতর হইতে কে ভাকিয়া বলিলা-মা ছাড়া আর কেউ নয়। কাকুখনো আর কেউ নয়, ঠিক মা ! বাড়ী ঢুকিয়া সে দেখিল মা বসিয়া বসিয়া বেশ নিশ্চিন্তমনে কঁঠালবীচি খুঁইতেছে। সে হঠাৎ দাড়াইয়া পড়িল এবং যাত্র-দলের অভিমন্যর মত ভঙ্গিতে সামনের দিকে ঝুকিরা বঁাশীয় সপ্তমের মত রিনারিনে তীব্র মিষ্টম্বরে কহিল-আচ্ছা মা, আমি কষ্ট করে ছোেটাগুলো বুঝি বন বাগান ঘটে নিয়ে আসিনি ? সৰ্বজয়া পিছনে চাহিয়া বিশ্বিতভাবে বলিল-কি নিয়ে এসেছিল ? কি হয়েছে-আমার বুঝিা কষ্ট হয় না ? কঁাটায় আমার হাত পা ছাড়ে যায়নি বুঝি ? —কি বলে পাগলের মত ? হয়েচে কি ? ---কি হয়েছে ! আমি এত কষ্ট ক’রে টেলিগিরাফের তার টাঙালাম আয় ছিঙে দেওয়া ests, a —তুমি যত উদঘুটে কাণ্ড ছাড়া তো এক দণ্ড থাকো না বাপু টি-পথের মাঝখানে কি টাঙানো রয়েচে—কি জানি টেলিগিয়াপ কি কি-গিরিাপ, আসচি তাড়াতাড়ি, ছিড়ে গেল-তা এখন কি করবো বলে পরে সে পুনরায় নিজ কাজে মন দিল । উঃ! কি ভীষণ হৃদয়হীনতা ! আগে আগে সে ভাবিত বাট যে, তাহান্ন মা তাহাকে ভালবাসে। অবশ্য যদিও তাহার সে ভ্রান্ত ধারণা অনেকদিন ঘুচিয়া গিয়াছে—তবুও মাকে এতটা নিষ্ঠুর পাষাণীরূপে কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করে নাই। কাল সারাদিন কোথায় নীলমণি জেঠার ভিটা, কোথায় পালিতদের বড় আমবাগান, কোথায় প্রসন্ন গুরুমহাশয়ের বঁাশবন-ভয়ানক ভয়ানক জঙ্গলে এক ঘুরিয়া বহু কষ্ট উচু ডাল হইতে দোলানো গুলফলতা কত কষ্টে যোগাড় করিয়া সে আনিল, এখুনি রোল-রেল খেলা হই২ে, সব ঠিক ঠাক, আর কি না--- হঠাৎ সে মাকে একটা খুব কড়া, খুব রূঢ়, খুব একটা প্ৰাণ-বিধানো কথা বলিতে চাহিলএবং খানিকটা দাড়াইয়া বোধ হয় অঙ্ক কিছু ভাবিয়া না পাইয়া আগের চেয়েও তীব্র নিখাদে ‘বলিল-আমি আজ ভাত খাবো না যাও-কখখনো খাবো না তাহায় যা বলিল-না খাবি না খাবি ঘা-তাত খেয়ে একেবারে রাজা ক’য়ে দেবেন।