বিভূতি-রচনাবলী মধুৰ গন্ধ ভয়া দিনগুলি ইহার আগে কবে একবার যেন আসিয়াছিল, সে সব দিনের অনুভূত আনন্দের অস্পষ্ট স্মৃতি আসিয়া এই দিনগুলিকে অবিন্যতের কোন অনির্দিষ্ট আনন্দের আশায় গুয়িয়া তোলে। মনে হয় একটা যেন কিছু ঘটবে, এ দিনগুলি বুৰি বৃথা যাইবে না-একটা বড় কোনো আনন্দ ইহাদের শেষে অপেক্ষা করিয়া আছে যেন ! এই অপরাহুগুলির সঙ্গে, আজম্বসাখী সুপরিচিত, এই আনন্দ ভরা বহুরূপী বনটার সঙ্গে কত রহস্যময়, স্বপ্ন-দেশের বাৰ্ত্তা যে জড়ানো আছে । বঁাশঝাণ্ডের উপরকার ছায়া-ভরা আকাশটার দিকে চাহিয়া সে দেখিতে পায, এক তরুণ বীরের উদারতার সুযোগ পাইয়া কে প্ৰান্ধী একজন তাহার অক্ষয় কবচ-কুণ্ডল মাগিয়া লইতে হাত পাতিয়াছে, পিটুলি-গোলা পান করিয়া কোথাকায় এক ক্ষুদ্র দরিদ্র বালক খেলুড়েদের কাছে 'দুগ্ধ খেয়েছি বলিয়া উল্লাসে নৃত্য করে,-ঐ যে পোড়ো ভিটার বেলতলাটা-ওইখানেই তো শল্পশয্যাশায়িত প্ৰবীণ বীর ভীষ্মদেবের মরণাহত ওঠে তীক্সবাণে পৃথিবী ফুডিয়া অৰ্জ্জুন ভোগবতীধারা সিঞ্চন করিযাছিলেন। প্ৰথম যৌবনে সৱযুতািটর কুমিত কালনে মৃগয়া করিতে গিয়া রাজা দশরথ মৃগভ্ৰমে যে জল-আহরণৱত দরিদ্র বালককে বধ করেন-সো ঘটিয়াছিল ওই রাখুদিদিদের বাগানের বড় জাম গাছটার তলায় যে চোবা। --তাহারই ধাৱে। তাহাদের বাড়ী একখানা বই আছে, পাতাগুলা সব হলদে, মলাটটার খানিকটা নাই, নাম লেখা আছে, ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’, কিন্তু লেখকের নাম জানে না, গোডার দিকের পাতাগুলি ছিড়িয়া গিয়াছে। বইখানা বড় ভাল লাগে-তাহাতে সে পডিয়াছে :- অদূরে দেখিত্ব হ্রদ, সে হ্রদের তীরে রাজরার্থী একজন যান গড়াগড়ি ਲਰ ਕੇ ਲੋਲ ਲੋਕ ਸ਼ এ কি কুস্বপন নাথ দেখাইলা মোৱে । কলুইচণ্ডী ব্ৰতের দিন মাযের সঙ্গে গ্রামেব উত্তর মাঠে যে পুরানো, মজা পুকুরের ধারে সে বন-ভোজন করিতে যায়-কেউ জানে ন-চারিধারে বনে ঘেরা সেই ছোট পুকুরটাই মহাভারতের সেই দ্বৈপায়ন হ্রদ। ঐ নির্জন মাঠের পুকুরটার মধ্যে সে ভগ্নউরু, অবমানিত বীয় থাকে এক একা, কেউ দেখে না, কেউ খোজ করে না । উত্তীয় মাঠের কলা-বেগুনেয় ক্ষেত হুইতে কৃষণের ফিরিষা আসে, জনমানুষের চিহ্ন থাকে না কোনো দিকে-সেনাক্তাঞ্জা মাঠেয় পারেন্ধ অনাবিকৃত, বসতিশূন্য, অজানা দেশে চন্দ্ৰহীন রাত্রির ঘন অন্ধকার ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে, তখন হাজার হাজার বছরের পুরাতন মানব-বেদনা কখনো বা দরিদ্র পিতার প্রবঞ্চনামুণ্ড অবোধ বালকের উল্লাসে, কখনো বা এক ভাগ্যহত, নিঃসঙ্গ, অসহায় রাজপুত্রের ছবিতে তাহার প্রবর্তমান, উৎসুক মনের সহানুভূতিতে জাগ্রত ও সার্থক হয়!! ঐ অজ্ঞাতনামা লেখকের বইখানা পড়িতে পড়িতে কতদিন যে তাহার চোখের পাতা ভিজিয়া আসিয়াছে ! তাহার বাবা বাড়ী নাই। বাড়ী থাকিলে গাহাঁকে এক মনে ঘরে বসিয়া দপ্তর খুশিয়া পড়িতে হয়। একেবারে বেলা শেষ হইয়া যায়। তবুও দুটি হয় না। তাহান্ন মন ব্যাকুল
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/১৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।