Swe)ዔ অপু বলে, তা না, একজন তো চলে যাবে, শুধু অজয় খাবেদুৰ্গা বল্পে-কেমন যাত্রা রে অপু ?--এমন কক্ষনো দেখিনি-কেমন গান কল্পে ধখন সেই রাজকন্যা ম'রে গেল? আপুৱা তো রাত্রে ঘুমের ঘোৱে চারিধাৱে যেন বেহালা সঙ্গীত হয়। ভোর হইলে একটু বেলায় তাহার ঘুম ভাঙে-শেষ রাত্রে ঘুমাইয়াছে, তৃপ্তির সঙ্গে ঘুম হয় নাই, সুৰ্য্যের তীষ্ম আলোয় চোখে যেন সুচ বিধে। চোখে জল দিলে জাল করে। কিন্তু তাহার কানো একটা বেহালা-ঢোল-মন্দিরায় ঐকতান বাজনা তখনও যেন বাজিতেছে-তখনও যেন সে যাত্ৰাৱ আসরেই বসিয়া আছে। ঘাটের পথে যাইতে পাড়ার মেয়ের কথা বলিতে বলিতে যাইতেছে, অপুৱ মনে হুইল কেহ ধীরাবতী, কেহ কলিঙ্গদেশের মহারাণী, কেহ রাজপুত্র অজয়ের মা বসুমতী । দিদিয়া প্ৰতি কথায়, হাত পা নাড়ার ভঙ্গীতে, রাজকন্যা ইন্দুলেখা যেন মাখানো ! কাল যে ইন্দুলেখা সাজিয়াছিল তাহাকে মানাইয়াছিল। মন্দ নয় বটে, কিন্তু তাঁহার মনে মনে রাজকন্যা ইন্দুলেখার যে প্ৰতিমা গড়িয়া উঠিয়াছে, তাহা তাহার দিদিকে লইয়া, ঐ রকম গায়ের রং, অমনি বড় বড় চোখ, অমান সুন্দর মুখ, অমনি সুন্দর চুল ! ইন্দুলেখা তাঙ্গায় সকল করুণা, স্নেহ, মাধুৰী লইয়া কোন সেকালের দেশের অতীত জীবনের পয়ে আবার তাহার দিদি হইয়া যেন ফিরিয়া আসিয়াছো-কাল তাই ইন্দুলেখার কথার ভঙ্গীতে, প্ৰতি পদক্ষেপে দিদিই যেন ফুটিয়া ফুটিয়া বাহির হইতেছিল। যখন গভীর বনে সে শতক্ষেহে ছোট ভাইকে জড়াইয়া ব্ৰাখিয়াছিল, তাকে খাওয়াইবার জন্য ফল আহরণ করিতে গিয়া নির্জন বনের মধ্যে হাৱাইয়া গেল-সেই একদিনের মাকাল ফলের ঘটনাটাই অপুৱ ক্ৰমাগত মনে হইতেছিল। দুপুত্র বেলা খাইবায় জন্য অপু গিয়া অজয়কে ডাকিয়া আনিল । তাহার মা দুজনকে এক জায়গায় খাইতে দিয়া অজয়ের পরিচয় লইতে বসিল । সে ব্রাহ্মণের ছেলে, তাহার কেহ নাই, এক মাসী তাহাকে মানুষ করিয়াছিল, সেও মরিয়া গিয়াছে। আজ বছরখানেক যাত্ৰাৱ দলে কাজ করিতেছে। সৰ্ব্বজয়ার ছেলেটির উপর খুব স্নেহ হইল-বায় বার জিজ্ঞাসা করিয়া তাহাকে খাওয়াইল । খাওয়াইবার উপকরণ বেশী কিছু নাই, তবু ছেলেটি খুব খুশির সঙ্গে খাইল। তাহার পর দুর্গা মাকে চুপি চুপি বলিলা-মা, ওকে সেই কালকের গানটা গাইতে বল না—সেই “কোথা ছেড়ে গেলি। এ বন-কান্তাৱে প্ৰাণপ্রিয় প্ৰাণ-সাৰ্থীরে”- অজয় গলা ছাড়িয়া গানটি গাহিল-অপু মুগ্ধ হইয়া গেলি-সৰ্বজয়ার চোখের পাতা ভিজিয়া আসিল। আহা, এমন ছেলের মা নাই! তাহার পর সে আয়ও গান গাহিল। সৰ্ব্বজয়া বলিল-বিকেলে মুড়ি ভাজবো, তখন ‘সি অবিশিষ্ট করে মুড়ি খেয়ে ধোও-লজ্জা করো না যেন-যখন খুশি আসবে, আপনার বাড়ীর মত, বুঝলে ? অপু তাঁহাকে সঙ্গে করিয়া নদীর ধারের দিকে বেড়াইতে গেল। সেখানে অজয় বলিল, তাই, তোমার তো গলা মিষ্টি-একটা গান গাও না ?--অপুত্ব খুব ইচ্ছা হইল ইহার কাছে গান গাহিয়া লে বাহাদুরী লুইবে । কিন্তু বড় ভয় করে-এ একজন যাত্ৰাদলের ছেলে-এর
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/১৯৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।