YAS विट्रडि-प्रश्नावनी --সব আছে, উনি একলা ষাকেন। সেই গঙ্গানন্দপুর-বড় সাহসী পুরুষ কিনা! অবশেষে কিন্তু অপুর নির্বত্বাতিশষ্যে তাহাকেই পাঠাইতে হইল। সোনাভাঙা মাঠের বুক চিরিয়া উচু মাটির পথ। পথের দু'ধাৱে মাঠের মধ্যে শুধুই আকৰ্ম্মফুলের বন, দীর্ঘ শ্বেতাভ ভটাগুলি ফুলের তায়ে নত হইয়া দুৰ্ব্বষালের উপর লুটাইয়া পঢ়িয়াছে। পথে কোনো লোক নাই, দুপুরের অল্পই দেরি আছে, গাছপালায় ছায়া ছোট হইয়া আসিতেছে। অপুর খালি পায়ে বেলে মাটিৰ তাত লাগিতেছিল- তাহাতে বেশ আরাম হয়। পথের ধারের বনে ঝোপে কত কি ফুল ফুটিষাছে, সঁই বাবলাগাছের নতুন ফোটা ফুলের শীষ সূৰ্য্যের দিকে মুখ ফিরাইয়া আছে, ছোট এক রকমের গাছে রাঙা য়াঙা বনভুমুরের মত কি ফল অজস্র পাকিয়া টুকটুকু করিতেছে, মাটির মধ্য হইতে কেমন রোদপোড়া সেঁদা সোদা গন্তু বাহির হইতেছে। সে মাঝে মাঝে নীচু হইয়া ঝোপের ভিতর হইতে খুজিয়া খুজিয়া বৈঁচিফল তুলিয়া হাতে-সেলাই-করা রাঙা সাটিনের জামাটায় দু'পকেট ভত্তি করিয়া লইতেছিল। যাইতে যাইতে তাহার মন পুলকে ভরিয়া উঠিতেছিল । সে কাহাকেও বুঝাইয়া বলিতে পারে না যে, সে কী ভালবাসে এই মাটির তাজা রোপোড়া গঙ্কটা, এই ছায়াস্তারা দুৰ্বাঘাস, সুৰ্য্যের আলোমাখানো মাঠ, পথ, গাছপাল, পাখী, বনঝোপ, ঐ দোলানো ফুল-ফলের খোলো, আলফুশী, বনকমলী, নীল অপরাজিত । ঘরে থাকিতে তাহার মোটেই ইচ্ছা হয় না; ভাৱী মঙ্গা হয় যদি বাবা তাহাকে বলে-খোকা তুমি শুধু পথে-পথে ৰেডিয়ে বেডওতাহা হইলে এইরকম বনফুল-ঝুলানো ছায়াচ্ছন্ন-কোপের তলা দিয়া ঘুঘুভাকা দুর বনের দিকে চোখ ব্ৰাখিয়া এই রকম মাটির পথটি বাহিয়া শুধুই ইটে—শুধুই ইটে - মাঝে মাঝে হয়তো বঁাশবনে কঞ্চির ভালে ভালে শব্ৰু-শস্ত্ৰ শব্দ, বৈকালের রোদে সোনার সিদুর ছড়ানো আর নানা রং-বেরঙেএর পার্শ্বীয় গান । অপুত্র শৈশব কাটিতেছিল এই প্ৰকৃতির সহিত ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে। এক ঋতু কাটিয়া গিয়া কথন অন্য ঋতু পডে-গাছপালায়, আকাশে বাতাসে, পাখীর কাকলীতে তাহার বার্তা রটে। ঋতুতে ঋতুতে ইছামতীর নব নব পরিবর্তনশীল রূপ সম্বন্ধে তাহার চেতনা জাগ্ৰত হুইয়া উঠিয়াছিল-কোন ঋতু গাছপালায় জলে-স্থলে শূন্যে ফুলে ফলে কি পরিবর্তন ঘটায় তাহা সে ভাল করিয়া চিনিয়া ফেলিয়াছিল । ইহাদেৱ সহিত এই ঘনিষ্ঠ যোগ সে ভালবালে, ইহাদের ছাড়া সে জীবন কল্পনা করিতে পারে না । এই বিরাট অপরূপ ছবি চোখের উপরে রাখিয়া সে মানুষ হইতেছিল। গ্রীষ্মের খৱতাপ ও গুমন্টের অবসানে সারা দিকচক্রবাল জুড়িয়া খননীল মেঘলাজার গভীর সুন্দর রূপ, অস্তু-বেলায় সোনাভাঙার মাঠের উপয়কার আকাশে কত বর্ণের মেঘের খেলা, ভাত্রের শেষে ফুটন্তু কাশ-ফুলে ভরা মাধবপুরের ঘুরপ্রসারিত চর, টাদিনী রাতে জ্যোৎস্নাজালের খুপারি-কাটা বঁাশবনের তলা-অপুর ক্ষুটনোন্মুখ কৈশোয়ের সতেজ আগ্রহভরা অনাবিল মনে ইহাদের অপূর্ব বিশাল সৌন্দর্ঘ্য চিরস্থায়ী ছাপ মারিয়া দিয়াছিল, কাস্তিরসের চোখ খুলিয়া দিয়াছিল, চুপি চুপি তাহার কানে অশ্বতের দীক্ষামন্ত্র
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/২৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।